বারবার জামিন নাকচ, আবারও জেল হেপাজতে সায়গল

আসানসোল: গোরু পাচার (cow smuggling) মামলায় আবারও জামিন নাকচ (Bail denied) হল বীরভূমের তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mandal) প্রাক্তন দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের। আসানসোল জেল থেকে বৃহস্পতিবার আসানসোলে সিবিআইয়ের (CBI) বিশেষ আদালতে তোলা হয় সায়গল হোসেনকে। দুপুর পৌনে দুটে নাগাদ শুনানি শুরু হয়। প্রায় আধঘণ্টা ধরে দুপক্ষের আইনজীবীর সওয়াল-জবাব শেষে বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী তার জামিন নাকচ করে ১৪ দিনের জেল হেপাজতের নির্দেশ দেন। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর আবার তাকে আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে তোলা হবে বলে নির্দেশ দেন বিচারক ।
এদিন সায়গলের আইনজীবী অনির্বাণ গুহ ঠাকুরতা যেকোনও শর্তে তার জামিনের আবেদন করেছিলেন। তিনি বলেন, অনেক আগেই এই মামলায় চার্জশিট জমা পড়েছে। তাহলে আবার তদন্ত কি হবে? আইন মতো এবার ট্রায়াল শুরু করা হোক। কিন্তু বারবার তদন্ত করা হচ্ছে, ডকুমেন্ট ট্যাম্পারিং করা ও প্রভাবশালীর তত্ত্ব খাড়া করে সিবিআই আমার মক্কলের জামিন আটকে দিচ্ছে। তদন্ত যদি এখনো বাকি, তাহলে চার্জশিট জমা দেওয়া হল কেন? যদি ৫০ বছর ধরে তদন্ত চলে, তাহলে কি আমার মক্কেল ৫০ বছর জেলে থাকবেন? এছাড়া সিবিআইয়ের মতো একটা এজেন্সির চোখের সামনে থেকে সে ডকুমেন্ট ট্যাম্পার করবে সেটা কিভাবে হয়?
আইনজীবী এদিন এজলাসে সওয়াল করে বলেন, ইডি দিল্লির বিশেষ আদালতে সায়গলকে প্রথমে নিজেদের হেপাজতে ও পরে আসানসোল জেলে এসে জেরা করার আবেদন করেছিল। কিন্তু বিচারক তা খারিজ করে দেন। এর থেকে তো পরিষ্কার একটা ‘টার্গেটে’ তদন্ত করা হচ্ছে। আমার মক্কেল প্রায় ১০০ দিন ধরে হেপাজতে রয়েছেন। তাই তাকে যে কোনও শর্তে জামিন দেওয়ার হোক।
কিন্তু সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার সায়গলের জামিনের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, তদন্ত চলছে। এর জামিন হলে তদন্ত প্রভাবিত হবে। কেন না সায়গল যথেষ্ট প্রভাবশালী। এছাড়াও গত ১৪ দিনে অনেক ডকুমেন্টস পাওয়া গিয়েছে। এদিন এজলাসে থাকা এই মামলার তদন্তকারী অফিসার সুশান্ত ভট্টাচার্যর কাছে বিচারক জানতে চান, গত ১৪ দিনে তদন্তে কি পাওয়া গিয়েছে? তখন তিনি বিচারককে একটি ফাইল দেন। তাতে কিছু ডকুমেন্টস ও স্টেটমেন্টস আছে বলে জানান। তবে কোনও রিকোভারি হয়নি বলা হয়।
শেষ পর্যন্ত বিচারক সায়গলের জামিন নাকচ করে ১৪ দিনের জেল হেপাজতের নির্দেশ দেন।
এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর সায়গলকে আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে তোলা হয়েছিল। কিন্তু আসানসোল জেলা আদালতের এক প্রবীণ আইনজীবীর মৃত্যুর কারণে সেদিন আইনজীবীরা কর্মবিরতিতে ছিলেন। তাই কোনও শুনানি সেদিন হয়নি। বিচারক সেদিন তার জামিন নাকচ করে ১৪ দিনের জেল হেপাজতে পাঠিয়ে, ১৫ সেপ্টেম্বর পুনরায় শুনানির নির্দেশ দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সায়গলের হেপাজতে থাকার মেয়াদ ৯৮ দিন পার করল। পরবর্তী শুনানির দিন সেই মেয়াদ বেড়ে ১১২ দিন হবে। প্রসঙ্গত,এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত বিনয় মিশ্র বর্তমানে পলাতক। মামলার অন্যতম এনামুল হক ও বিএসএফের কমান্ড্যান্ট সতীশ কুমারকে সিবিআই গ্রেপ্তার করলেও তারা এই মুহূর্তে শর্তসাপেক্ষে জামিনে রয়েছে। একই সঙ্গে বিনয়ের ভাই বিকাশ মিশ্রকেও গ্রেপ্তার করেছিল সিবিআই। বিকাশ কিছুদিন আগে আসানসোলের সিবিআই আদালত থেকে গোরু পাচার মামলায় জামিন পেয়েছে।
তবে কয়লার মামলায় শুনানি চলছে। বর্তমানে আসানসোল জেলে রয়েছে বিকাশ মিশ্র। সিবিআই হেপাজতের পর থেকেই সায়গল হোসেন আসানসোল বিশেষ সংশোধনাগারে রয়েছে। এদিন বিচারকের নির্দেশের পরে আবার তাকে আসানসোল আদালত থেকে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × one =