আর মাত্র দুদিনের অপেক্ষা। আগামী মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। দু-দিনের এই মেগা শিল্প সমাবেশের শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে (বিজিবিএস) অংশ নিতে আসছেন দেশ-বিদেশের তাবড় শিল্পপতিরা।
নবান্নের কর্তাদের দাবি, শিল্প সম্মেলনে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে ইতিমধ্যেই সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন রিলায়েন্স গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি থেকে শুরু করে নিরঞ্জন হিরানন্দানির মতো দেশের নামকরা শিল্পপতিরা। ইউরোপ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেও একঝাঁক শিল্পপতি বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দেবেন। তবে আমন্ত্রিতদের মধ্যে সবথেকে বেশি আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন হিরানন্দানি গ্রুপের কর্ণধার নিরঞ্জন হিরানন্দানি। সম্প্রতি ‘ক্যাশ ফর কোয়েশ্চেন’ বিতর্কে নাম জড়িয়েছে হিরানন্দানি গ্রুপের। শিল্পপতি দর্শন হিরানন্দানির থেকে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে আদানি গোষ্ঠীকে নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তোলার মতো গুরুতর অভিযোগ এনেছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে।
দর্শন হিরানন্দানি সম্পর্কে নিরঞ্জনের ছেলে। আদানি গোষ্ঠীকেও সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। গত বারের মতো এই বছরও আদানি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা আসবেন বলে আশা করছে রাজ্য সরকার। উল্লেখ্য, তাজপুর বন্দর তৈরির জন্য রাজ্যের তরফে আদানি গোষ্ঠীকে ইতিমধ্যেই ‘লেটার অফ ইনটেন্ট’ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবারের মতো এবারও বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও বক্তব্য রাখবেন নামকরা শিল্পপতিরা। বক্তাদের তালিকায় থাকার কথা রিলায়েন্স গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি, হিরানন্দানি গ্রুপের কর্ণধার নিরঞ্জন হিরানন্দানি, আইটিসি’র চেয়ারম্যান সঞ্জীব পুরী, জেএসডব্লিউ গ্রুপের চেয়ারম্যান সজ্জন জিন্দল, আরপি সঞ্জীব গোয়েঙ্কা গ্রুপের সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, চ্যাটার্জি গ্রুপের চেয়ারম্যান পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের মতো খ্যাতনামা শিল্পপতিরা।
২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই নিয়ে সপ্তমবার বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতবারের মতো এবারও তার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি হবে রাজারহাটের বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে। আগামী ২১ নভেম্বর এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টানা দু’ঘণ্টা ধরে এই অনুষ্ঠান চলবে। বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে সাড়ে ছ’টা পর্যন্ত রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল প্লেনারি সেশন। পরের দিন অর্থাৎ ২২ নভেম্বর বাণিজ্য সম্মেলনের সমাপ্তি অনুষ্ঠান হবে আলিপুরের ধনধান্য অডিটোরিয়ামে। বেলা তিনটে থেকে চারটে পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান চলবে। অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য গঙ্গা ভ্রমণের পাশাপাশি আলিপুর জেল মিউজিয়াম ঘুরিয়ে দেখানো হবে। হাতে গোনা কয়েকজন মন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এই অনুষ্ঠানে। শুক্রবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, যেসব মন্ত্রীকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে, তাঁরাই যেন হাজির থাকেন সেখানে।
বাণিজ্য সম্মেলনে আগত দেশ-বিদেশের শিল্পপতিদের সামনে বাংলায় বিনিয়োগের জন্য বেশ কয়েকটি নতুন ক্ষেত্রকে প্রোজেক্ট করা হবে। তার মধ্যে রয়েছে রাজ্যের প্রস্তাবিত পুরুলিয়ায় ৪ হাজার একরের জঙ্গলসুন্দরী কর্মনগরী, ডানকুনি-হলদিয়া, ডানকুনি-কল্যাণী, ডানকুনি-রঘুনাথপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ করিডর এবং নিউ টাউনে বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালি হাব। এছাড়াও কৃষি এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উপর বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হবে।