সম্প্রতি রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় তুলেছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের কোঅর্ডিনেটর অজিত মাইতির সঙ্গে এক ফ্রেমে বিজেপি তারকা বিধায়ক হিরণের একটি ছবি। এরপরই জল্পনাও ছড়ায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন তিনি।একইসঙ্গে এ দাবিও ওঠে, তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে দেখা করতে গিয়েছিলেন বিজেপি বিধায়ক।এদিকে গত কয়েক দিন ধরেই এই জল্পনাতে সিলমোহর দেয় হিরণের ট্যুইটার অ্যাকাউন্ট। কারণ, সেখানে ‘বিজেপি’ শব্দ মুছে লেখা খড়্গপুর সদরের বিধায়ক এবং কাউন্সিলর। তিনি কোন দলের সঙ্গে যুক্ত, তা লেখা নেই হিরণের ট্যুইটার অ্যাকাউন্টে। এমনকী এমনটাও কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল, আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে সভা অভিষেকের। সেখানেই হিরণ বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরতে পারেন বলেও শুরু হয় জোর জল্পনা। তবে এ নিয়ে কোনও পক্ষেরই কোনও আনুষ্ঠানিক সমর্থন নেই। কিন্তু এই জল্পনার মাঝেই সেই ভাইরাল ছবির ছড়ানোর এক সপ্তাহের মধ্যে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ খুলতে দেখা গেল খড়গপুরের বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে। এদিন রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, তিনি বিজেপিতেই আছেন, বিজেপিতেই থাকবেন। এর পাশাপাশি তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করার প্রসঙ্গেও তিনি জানান, ২০২১ সালের পর থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার কখনও দেখাও হয়নি। সঙ্গে এ দাবিও করেন, যে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা হয়েছে তাতে তাঁর ছবি বিকৃত করা হয়েছে। এদিন এ প্রসঙ্গে হিরণের সংযোজন, ‘কত ছবি রয়েছে যেখানে আমি আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বসে রয়েছি। অভিষেক আর আমি সোফাতে একসঙ্গে বসে আছি এরকমও কত ছবি আছে। ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সালের আগে পর্যন্ত প্রতিটা জেলায় জেলায় আমরা ঘুরেছি। কত হোটেলে থেকেছি। একইগাড়িতে বসে গিয়েছি। উনি বাঁদিকে বসতেন, আমি ডানদিকে বসতাম। সামনে ওনার সেক্রেটারি সুমিত বসতেন। এখন যদি কোনও একটা ছবি ডিজিটালি বিকৃত করে কিছু করেন, তাহলে কিছু করার নেই।’
এই প্রসঙ্গে হিরণ তুলে আনেন কুণাল ঘোষের জন্মদিনেও তো দিলীপ ঘোষকে কেক খাওয়ার প্রসঙ্গও। বলেন, ‘ কুণাল ঘোষের জন্মদিনেও তো দিলীপ ঘোষকে কেক খেতে দেখা গিয়েছে। তাবলে কি কুণাল ঘোষ যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে? নাকি দিলীপ ঘোষ তৃণমূলে চলে গিয়েছেন?’ এর পাশাপাশি হিরণকে এদিন এও বলতে শোনা যায়, ‘আমার ফেসবুক, ট্যুইটারে গেলে দেখতে পাবেন, মানুষ একটাই কথা বলছেন। বলছেন, দাদা ওই চোরের দলে যাবেন না। কারণ, চোরের দলে গেলে পুরো বাংলা শেষ হয়ে যাবে।’ এরই রেশ টেনে এদিন হিরণ তৃণমূলকে ‘দেউলিয়া পার্টি’ বলে কটাক্ষ করে বলেন, ‘একটা চোর-ডাকাতদের দলের এতটা ক্রাইসিস যে তাঁরা একটা ছবি দেখিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টির একতা, বিশ্বাস, বিজেপির দৃঢ়তা, প্রতিশ্রুতিকে নষ্ট করতে চাইছে।‘
এদিকে সূত্রে খবর, শুক্রবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বৈঠক করেন হিরণ। শুভেন্দুর নিজাম প্যালেসের দফতরে প্রায় আধ ঘণ্টা ছিলেন খড়্গপুরের বিধায়ক। একান্তে আলোচনা করেন তাঁরা। তার পর শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপিতেই থাকার কথা জানিয়ে দেন তিনি।
এদিকে শুক্রবার ওই বিজেপি বিধায়কের সঙ্গে সাক্ষাতের পর শুভেন্দু বলেন, ‘হিরণ বাইরে গিয়েছিল। এসে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। ভাল থাকুক। সোমবার আবার দেখা হবে।’ দলবদলের জল্পনা নিয়ে কিছু দিন আগে খড়্গপুরে সভায় হিরণ বলেছিলেন, ‘সময় সব উত্তর দেবে।’ তাঁর কথায়, ‘জীবনে আজ অবধি কালো দাগ লাগার সুযোগ দিইনি।’ প্রসঙ্গত, আগে তৃণমূলেই ছিলেন হিরণ। অভিষেকের সঙ্গে তাঁর ছিল সুসম্পর্ক। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। গেরুয়া শিবিরের টিকিটে প্রার্থী হয়ে জয়ও পান টলিউডের ওই অভিনেতা।