হিমাচলে বিজেপির ধাক্কা কী শুধু প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া না অন্য কিছু!

শুভাশিস বিশ্বাস

 

হিমাচলপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে জোর লড়াই চলছে কংগ্রেসের। হঠাৎ- পাহাড়ের চডা়ইয়ে কেন গতি কমল মোদির ডাবল ইঞ্জিন-এর তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আর সেটাই স্বাভাবিক। কারণ, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে যে ছবি আমরা দেখছি তাতে  হিমাচলে প্রায় ৬১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। তিন বছরে এতটা পরিবর্তনের পিছনে ঠিক কী কারণ থাকতে পারে তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লষকদের মধ্যে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এটা শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা বোধহয় নয়, এর পাশাপাশি রয়েছে আরও কারণ। দলের মধ্যে তৈরি হয়েছিল বিরাট অসন্তোষ। যার আঁচ পোহাতে হচ্ছে মোদিকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, হিমাচলপ্রদেশে ভোটের মুখে টিকিট নিয়ে দলের অন্দরে ক্ষোভ জন্মায়। যার প্রতিফলন পড়েছে নির্বাচনের ফলে। কারণ, দলের টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসেবে লড়েছেন বিজেপির অনেকেই। যার জেরে ভোট ভাগের অঙ্কে  আখেরে লাভ হয়েছে কংগ্রেসের। তবে এবার টনক নড়েছে বিডেপির। ফল প্রকাশের পরই জয়ী নির্দলদের ঘরে ফেরানোর সমস্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তাঁরা।

হিমাচল বিধানসভায় মোট আসন ৬৮ টি। এবার প্রার্থী তালিকায় আগাগোড়া বদল এনেছিল বিজেপি। দলের ১১ জন বিধায়ককে এবার আর মনোনয়ন দেওয়াই হয়নি পদ্ম শিবির থেকে। তার বদলে প্রার্থী তালিকায় নজরে আসে বেশ কিছু নতুন মুখ। আর এখানেই সব সমস্যার সূত্রপাত। নয়া এই প্রার্থী তালিকা দেখেই হিমাচলের বিজেপি শিবিরে তৈরি হয় অসন্তোষ। দলের বেশ কিছু নেতা, যাঁদের নিজেরদের অঞ্চলে ভাল প্রভাব রয়েছে নির্দল হিসেবে লড়ার সিদ্ধান্ত নেন। যার নিট ফল ভোট ভাগাভাগি।

এই বিক্ষুব্ধদের মধ্যে অন্যতম মুখ কৃপাল পারমার। হিমাচলের ফতেপুর  থেকে নির্দল হিসেবে ভোটে লড়া পারমারকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং ফোন করেন বলে সূত্রে খবর। কৃপাল পারমারও এমনটা জানান। মোদির এই পোন যাওযার পরও বরফ গলেনি। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার এই স্কুল সহপাঠী জানিয়েছিলেন, ৩০ অক্টোবর তাঁর কাছে প্রধানমন্ত্রীর নাম নিয়ে ফোন আসে। পারমার তার উত্তরে জানান, , ১৫ বছর ধরে বিজেপিতে অপমানিত হয়ে চলেছেন তিনি। পারমারের দাবি ফোনের ওপার থেকে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়, যে তিনি এই ফোনের মূল্য বুঝতে পারেননি। এরপরই নির্দল হিসেবেই  ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নেন পারমার। হিমাচলের ফতেপুর আসনে প্রায় বিজেপির প্রার্থীর থেকে প্রায় সাত হাজার ভোট বেশি পেয়েছে কংগ্রেস। পারমার পেয়েছেন প্রায় ২৭০০ ভোট। ফলে পারমারের বক্তব্য অনুসারে একটা কথা বলাই যায়, ফোন করেছিলেন মোদ ঠিকই, কিন্তু পারমারের কথার গুরুত্ব তখন তিনি বোঝেননি। বুঝেছেন নির্বাচনী ফল প্রকাশের পর। এটাকেই হয়তো বলে, ‘দাঁত থাকতে মানুষ দাঁতের মর্ম বোঝে না।‘ এখন সেই দাঁতের মর্ম হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন মোদি। এদিকে আবার খবর মিলছে, ঘোড়া কেনা বেচায় সিদ্ধহস্ত বিজেপির নেতারা মাঠে নেমে পড়েছেন।  ভোটের ফলে এগিয়ে থাকা নির্দল প্রার্থীদের সঙ্গে ইতিমধ্য যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছেন পদ্মশিবিরের নেতারা। এদের মধ্যে দু’জন বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা হিমাচলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রেম কুমার ধুমলের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

এর পাশাপাশি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আরও ধারনা, গত ২ বছর ধরে শান্তশিষ্ট এই পাহাড়ি রাজ্যে বিজেপি গুজরাতের মতো কোনও পরিবর্তন করেনি। সরকার বিরোধী হাওয়া টের পেলেও মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুরকে বদল করেনি গেরুয়া শিবির। ঠাকুর নিজেও অতি শান্ত এক ব্যক্তি। তাঁর মধ্যে কোনও আগ্রাসী মনোভাব নেই। তাঁর প্রতি কারও কোনও অভিযোগ নেই। উল্টোদিকে, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি হিমাচলের ভূমিপুত্র জে পি নাড্ডা রাজ্য নেতৃত্বের উপর ছড়ি ঘোরানোয় দলের অন্দরে ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। রাজ্য নেতাদের অভাব-অভিযোগে তিনি কোনওদিন কর্ণপাত করেননি। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজ্যে ভোট প্রচারে এসে বলেছিলেন, ‘আমাকে ভোট দিন।‘ যা স্থানীয় নেতাদের মনে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − 15 =