গারদেই কাটবে রাজু সাহানির দুর্গাপুজো, ফের জেল হেপাজত

আসানসোল: বর্ধমান সানমার্গ চিটফান্ড মামলায় বৃহস্পতিবার জামিন মিলল না হালিশহর পুরসভার চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা রাজু সাহানির। এদিন দু’পক্ষের আইনজীবীর দীর্ঘ সওয়াল-জবাব শেষে আসানসোল জেলা আদালতের সিজিএম তরুণ কান্তি মণ্ডল, রাজু সাহানির জামিন নাকচ করে ফের জেল হেপাজতের নির্দেশ দেন। আগামী ১৫ অক্টোবর এই মামলায় পরবর্তী শুনানি হবে বলে সিজিএম নির্দেশ দিয়েছেন।
বলা যেতে পারে, একদিকে শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি মামলার প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়,অন্যদিকে গোরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডল, তারপর হালিশহর পুরসভার চেয়ারম্যান রাজু সাহানির এই বছরের দুর্গাপুজো কাটবে জেলে বসেই।
এদিন রাজু সাহানির তিন আইনজীবী প্রদীপ কর, সৌমেন চট্টোপাধ্যায় ও আশিস মুখোপাধ্যায় তাঁর জামিনের জন্য জোর সওয়াল করেন। সিবিআইয়ের তদন্ত পদ্ধতি নিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তোলেন। পাশাপাশি তাঁরা সামনে মহালয়া ও দুর্গাপুজো থাকার প্রসঙ্গ তুলে যেকোনও শর্তে রাজুকে জামিন দেওয়ার আবেদন করেন।
অন্যদিকে, সিবিআইয়ের আইনজীবী শীবেন্দ্র সাচান জবাবে রাজু সাহানিকে প্রভাবশালী বলার পাশাপাশি বলেন, তিনি এই চিটফান্ড থেকে সুবিধা ভোগ করেছেন। আরও তদন্ত করা হচ্ছে বলে তিনি সরাসরি জামিনের বিরোধিতা করেন।
গত ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করার পরে রাজু সাহানিকে ৫ দিনের জন্য নিজেদের হেপাজতে পেয়েছিল এই মামলায় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। সেই মেয়াদ শেষে গত ৮ সেপ্টেম্বর তাঁকে আসানসোল আদালতে পেশ করেছিল সিবিআই। সেদিন রাজু সাহানির জামিন নাকচ করে ১৪ দিনের জেল হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন এসিজেএম। সেই মতো এদিন আসানসোল জেল থেকে তাঁকে এসিজেএমের এজলাসে তোলা হয়।
এদিন অবশ্য সিবিআইয়ের তরফে তাঁকে আবার হেপাজতে নেওয়া বা জেলে গিয়ে জেরা করার জন্য কোনও আবেদন করা হয়নি।
এদিন রাজু যে এই চিটফান্ড সংস্থার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন, তার তথ্য সিবিআইয়ের আইনজীবী শীবেন্দ্র সাচান আবারও বিচারকের সামলে তুলে ধরেন । তিনি বলেন, রাজু সাহানি এই চিটফান্ড সংস্থা থেকে ‘বেনিফিট’ পেয়েছেন। তিনি সুবিধা ভোগ করেছেন। ৯৫ লক্ষ টাকা সংস্থা থেকে তাঁর অ্যাকাউন্টে গিয়েছে। তারমধ্যে ৭৮ লক্ষ টাকা ফেরত হয়েছে। আগের দিন সিবিআইয়ের তরফে বলা হয়েছিলো রাজু’র থাইল্যান্ডে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। এছাড়াও বলা হয়েছিল তাঁর থাইল্যান্ড, হংকং ও ব্যাংককে তিনটি কোম্পানি ছিল। রাজু তার ডিরেক্টর। চিটফান্ড সংস্থার সঙ্গে এই সংস্থাগুলোর কোনও কিছু যোগসাজশ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে ইন্টারপোলকে বলা হয়েছে। পাশাপাশি তদন্তে দেখা, ফেরার থাকা এই চিটাফান্ড সংস্থার চেয়ারম্যান সৌম্যরূপ ভৌমিকের অনেক কিছু রাজুর ঠিকানায় ছিল। তার প্রমাণ আছে। তাই তাঁকে জামিন দেওয়া না হোক। জামিন পেলে তিনি সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন। কারণ তিনি খুবই প্রভাবশালী।
এদিন সিবিআইয়ের আইনজীবী ফেরার থাকা সৌম্যরূপ ভৌমিকের তথ্য ও রাজু সাহানির বাড়ি থেকে তল্লাশির সময় উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র’র কথা স্থানীয় থানায় জানানো হয়েছে। সিজিএমকে অবহিত করেন।
যদিও, রাজু’র তিন আইনজীবী প্রদীপ কর সৌমেন চট্টোপাধ্যায় ও আশিস মুখোপাধ্যায় সিবিআইয়ের আইনজীবীর দাবি মানতে চাননি। তাঁরা বলেন, সিবিআই আমাদের মক্কেলকে এদিন নতুন করে আর হেপাজতে চায়নি। গত ১৪ দিনে নতুন কিছু পাওয়া গিয়েছে কিনা তাও জানায়নি। তাহলে জামিন দেওয়া হলে কি হবে? বর্ধমান সানমার্গ মামলায় তদন্ত শুরু করায় পরে সিবিআই ২টি চার্জশিট জমা দিয়েছে। তাতে যাদের নাম আছে, তারা সবাই জামিন পেয়েছে। এখনও সংস্থার চেয়ারম্যানকে সিবিআই ধরতে পারে নি। তাঁরা বলেন, যে টাকা নেওয়া হয়েছিল, সেই টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। যে ৪০৯ নম্বর ধারা রয়েছে, তা রাজু সাহানির ক্ষেত্রে খাটে না। কারণ আমাদের মক্কেল তো সংস্থার কেউ নয়। আর বিদেশে কোম্পানি বা সংস্থার কথা সিবিআই বলছে। এটা কি কোনও অপরাধ? যে কারোর যে কোনও দেশেই সংস্থা থাকতে পারে। তিনি একটা পুরসভার চেয়ারম্যান। এটাই প্রভাবশালী হওয়ার একমাত্র তত্ত্ব? তার একটা সম্মান আছে। তাই যে কোনও শর্তে আমাদের মক্কেলকে জামিন দেওয়া হোক। কিন্তু সিজিএম শেষ পর্যন্ত রাজু সাহানির জামিন নাকচ করে ২৩ দিনের জন্য জেল হেপাজতের নির্দেশ দেন।
অন্যদিকে, এদিন এই চিটফান্ড মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পরে হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়া বর্ধমান পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও পুর প্রশাসক প্রণব চট্টোপাধ্যায় আসানসোল জেলা আদালতে সিজিএমের এজলাসে হাজিরা দেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর আইনজীবী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 − three =