দুই ট্রেনের ধাক্কায় বিপর্যস্ত শিয়ালদহে রেল পরিষেবা, প্রাথমিক তদন্তে বরখাস্ত কারশেডগামী চালক

নিজস্ব প্রতিবেদন, কলকাতা: বুধবার বেলা ১১টা ৪৭ নাগাদ শিয়ালদহ দুই লোকাল ট্রেনের ধাক্কার ঘটনায় বিপর্যস্ত ট্রেন চলাচল। দুই লোকালের ধাক্কায় তুবড়ে যায় একটি ট্রেনের চালকের কেবিন। অন্য ট্রেনটি লাইনচ্যুত। ধাক্কার তীব্রতায় কারশেডগামী ট্রেনের একটি চাকা ট্র্যাক ছেড়ে প্রায় তিন ফুট বাইরে চলে যায়। দুপুর সোওয়া বারোটা নাগাদ ঘটা দুর্ঘটনার প্রভাবে শিয়ালদহের বিভিন্ন শাখায় বিপর্যস্ত হয় ট্রেন পরিষেবা। বাতিল একাধিক লোকাল ট্রেন। পরে ট্রেন চললেও তার কোনও নির্দিষ্ট সময় ছিল না। অনিয়মিত ট্রেন চলাচলের ফলে সপ্তাহের কর্মব্যস্ত দিনে চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা। তবে সূত্রের খবর, এদিনের এই দুর্ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। এই ঘটনায় পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক জানান, শিয়ালদহ ছয় নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে একটি ট্রেন কারশেডের দিকে যাচ্ছিল। ওই সময়ই আট নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়ে রানাঘাট লোকাল। দুটি ট্রেনের পাশাপাশি ধাক্কা লাগে। অল্পের জন্য বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা।‘ একইসঙ্গে পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক এও জানান, ‘দু’’টি ট্রেনে ধাক্কা লেগেছে পাশাপাশি। মুখোমুখি ধাক্কার ঘটনা ঘটেনি। চোট আঘাতের ঘটনাও ঘটেনি। তবে ক্ষতি হয়েছে ট্রেনের। কারশেডগামী ট্রেনটির দুটি চাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপ রানাঘাট লোকালকে সরানো হলেও ধাক্কায় কারশেডগামী ট্রেনটি লাইনচ্যুত হওয়ায় সেটি লাইনে ফিরিয়ে নিয়ে বেগ পেতে হয় রেলকর্মীদের।এদিকে এই দুর্ঘটনার জেরে বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে সমস্ত ট্রেন। বুধবার দুপুর থেকেই দীর্ঘক্ষণ ধরে প্রায় স্তব্ধ হয়ে পড়ে রেল পরিষেবা। আটকে পড়ে একাধিক আপ ও ডাউন ট্রেন। এই ঘটনায় দীর্ঘক্ষণ ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে মেন লাইনে। ঘণ্টা দুয়েক পরে শুরু হয় পরিষেবা। এদিকে দুর্ঘটনার কবলে পড়া রানাঘাট লোকাল থেকে নেমে বহু যাত্রী রেল লাইন ধরে অনেককেই ফের এগিয়ে যেতে দেখা যায় শিয়লদহের দিকেই।
তবে এমন ঘটনার খবর পেতেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন শিয়ালদহের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার এবং আরও বেশ কিছু আধিকারিক।দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনদুটিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে পূর্ব রেলের তরফ থেকে জানাননো হয়, যাত্রী পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়ার পর তদন্ত কমিটি বসানো হবে। দুর্ঘটনার নেপথ্যে ‘হিউম্যান এরর’ নাকি সিগন্যাল টেলিকম প্রযুক্তির বিভ্রাট তা খতিয়ে দেখা হবে। যদি কারও ত্রুটি থাকে তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।
এদিকে দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে রেলের তরফে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু তাদের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার আগেই যে তথ্য সামনে এসেছে তাতে এই দুর্ঘটনায় কারশেডগামী ট্রেনের চালকের গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করছে রেলের তদন্ত কমিটি। ওই চালককে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে সূত্রে খবর। কারণ, প্রাথমিক তদন্তে প্রকাশ, শিয়ালদায় সিগন্যালিং ব্যবস্থায় কোনও ত্রুটি ছিল না। নির্দেশ না মানার কারণেই এমন দুর্ঘটনা। কারশেডগামী ট্রেনের শান্টারকে একটি নির্দিষ্ট জায়গা পর্যন্ত যাওয়ার পর থামতে বলা হয়েছিল কিন্তু তিনি না থেমে এগিয়ে যান। তাতেই শিয়ালদহ থেকে আসা যাত্রীবাহী রানাঘাটগামী ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। আর তারই জেরে কারশেডে নিয়ে যাওয়া চালক অর্থাৎ শান্টারকে ইতিমধ্যেই বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানান শিয়ালদহের ডিআরএম। অভিযুক্ত চালকের ওপর এনকোয়ারি চলছে। শিয়ালদহ ডিআরএম এই প্রসঙ্গে আরও জানান, বেলা ১১টা ৪৭ নাগাদ ট্রেনটিকে কারশেডে নিয়ে যাওয়ার জন্য ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরোয় কারশেডগামী ট্রেনটি। নির্দেশ মতো নির্দিষ্ট পয়েন্টে না থেমে এগিয়ে দাঁড়ায় ট্রেনটি। অন্যদিকে, রানাঘাট লোকালের চালক ট্র্যাক দিয়ে স্বাভাবিকভাবে এগোতেই ধাক্কা লাগে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 4 =