ইংল্যান্ডের রানের পাহাড়ে চাপা পড়ে সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে নেমেছে ভারত। তৃতীয় দিনের শেষে যেখানে ইংল্যান্ডের স্কোর ছিল ৭ উইকেটে ৫৪৪, সেখান থেকে চতুর্থ দিন সকালে বেন স্টোকস ও ব্রাইডন কার্সের দুরন্ত জুটিতে স্কোর গিয়ে দাঁড়ায় ৬৬৯-এ। স্টোকসের দাপুটে ১৪১ রানের ইনিংস এবং ভারতের বোলারদের ব্যর্থতায় ইংল্যান্ড ভারতের সামনে রেখে দেয় ৩১১ রানের বিশাল লিড। এই পরিস্থিতিতে ভারতের জবাব ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শুরুতেই ভেঙে পড়ে টপ অর্ডার। ক্রিস ওকসের এক দুর্ধর্ষ স্পেলে পরপর উইকেট হারান যশস্বী জয়সওয়াল এবং সাই সুদর্শন।
ভারতের স্কোর তখন মাত্র ১ রান, ২ উইকেট পড়ে গেছে। ম্যাচ তখনই হেলে পড়ে ইংল্যান্ডের দিকে। কিন্তু সেখান থেকেই ম্যাচ বাঁচানোর জন্য অস্তিত্বের লড়াই শুরু করেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার—কেএল রাহুল ও অধিনায়ক শুভমান গিল। একদিকে যখন চাপের পাহাড়, অন্যদিকে তখন তাঁদের ব্যাটিংয়ে ধরা পড়ে এক অনন্য ধৈর্য ও নিষ্ঠার পরিচয়। প্রথম সেশন পার করেন তারা অবিচলভাবে। দ্বিতীয় সেশনেও তাঁদের টলাতে পারেনি ইংল্যান্ডের পেস ও স্পিন আক্রমণ। চা-বিরতির সময় ভারতের স্কোর দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৮৬। বিরতির পরও তাঁদের ব্যাট ছিল দৃঢ় ও স্থির। কখনও ঠান্ডা মাথায় সিঙ্গেলস নিয়েছেন, আবার কখনও সুযোগ বুঝে বাউন্ডারিও হাঁকিয়েছেন। কিন্তু কোনও তাড়াহুড়ো বা বেপরোয়া শট খেলার ঝুঁকি নেননি। তাঁদের এই সংযমই দলের জন্য হয়ে দাঁড়ায় আশার আলো। রাহুল করেন ১৪১ বলে ৫০ রান, আর গিল মাত্র ৭৭ বলে তুলে নেন তাঁর হাফসেঞ্চুরি। চতুর্থ দিনের শেষে দু’জনেই অপরাজিত।
রাহুল ৮৭ ও গিল ৭৮ রানে ক্রিজে রয়েছেন।ভারতের ইনিংস দাঁড়ায় ২ উইকেটে ১৭৪। অর্থাৎ এখনও ১৩৭ রানে পিছিয়ে রয়েছে তারা। একদিন সময় হাতে। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চম দিন সকালে আবারও ‘শূন্য’ থেকে শুরু করতে হবে রাহুল ও গিলকে। সামান্যতম ভুল মানে সিরিজ হাতছাড়া হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। আর সেই কারণেই গোটা দলের দায়িত্ব এসে পড়েছে এই দু’জনের কাঁধে। ইংল্যান্ডের দিক থেকে দেখা গেলে, তারা এখন সম্পূর্ণ চালকের আসনে। ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই তারা অনেক এগিয়ে। কিন্তু এই কঠিন সময়ে টিম ইন্ডিয়ার সামনে একমাত্র লক্ষ্য—ম্যাচটিকে ড্র করানো। কারণ এই টেস্ট যদি হারে, তবে সিরিজও হাতছাড়া। কিন্তু যদি ড্র করতে পারে, তাহলে ওভালে পঞ্চম টেস্টে জয় তুলে নিয়ে সিরিজে সমতা ফেরানোর সুযোগ থাকবে গিল বাহিনীর। এই কঠিন সময়েই যেভাবে গিল ও রাহুল নিজেদের দায়িত্ব পালন করছেন, তাতে ভারতের ড্র করার স্বপ্ন এখনও জীবন্ত। বলাই যায়, ম্যাচ বাঁচানো নয়, একটা সিরিজ বাঁচিয়ে দিতে পারেন এই দুই ব্যাটার। এখন গোটা ক্রিকেটপ্রেমী দেশের দৃষ্টি তাঁদের দিকেই।

