কলকাতা: কে করবে মৃতদেহের সৎকার? তাই নিয়ে আত্মীয় ও প্রতিবেশীর মধ্যে দড়ি টানাটানি। তার জল গড়াল আদালতে। সম্প্রতি এমনই ঘটনা ঘটেছে কলকাতার বাঁশদ্রোনি থানা এলাকায়। তবে শুধু বাঁশদ্রোনি নয়। আগে একই ঘটনা ঘটেছিল আনন্দপুর থানা এলাকাতেও। আর দুই ক্ষেত্রেই আদালতের দ্বারস্থ হতে হয় পরিবারকে। আদালতের হস্তক্ষেপে সমস্যার সমাধান হয়েছে।
বাঁশদ্রোণি থানা এলাকার বাসিন্দা দীপঙ্কর সাহা। বছর ৭৫-র দীপঙ্করবাবুকে তাঁর ফ্ল্যাট থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে বাঁশদ্রোণি থানার পুলিশ। অবিবাহিত দীপঙ্করবাবু একাই থাকতেন। প্রাথমিকভাবে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে অসুস্থ হয়েই দীপঙ্করবাবুর মৃত্যু হয়েছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে পুলিশ। দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়। কিন্তু এরপরই শুরু হয় সমস্যা। ময়নাতদন্তের পরেই দীপঙ্করবাবুর দেহ নিতে হাজির হন দু’জন। একজন তাঁর প্রতিবেশী। তিনি দাবি করেন, তিনিই দীপঙ্করবাবুর দেখভাল করতেন। আর এক জন এসে দাবি করেন তিনি দীপঙ্করবাবুর আত্মীয়।
হঠাৎ করে দু’জন দেহ নিতে হাজির হওয়ায় পুলিশ দেহ দিতে অস্বীকার করে। পুলিশ দেহ দিচ্ছে না জানিয়ে দু পক্ষই হাজির হয় আদালতে। এমন পরিস্থিতিতে আদালত দু পক্ষের বক্তব্য শুনে মঙ্গলবার নির্দেশ দেয় দু পক্ষের হাতেই দেহ তুলে দিতে হবে। তবে দেহ দেওয়ার সময় বাঁশদ্রোণি থানার অফিসার ইনচার্জকে সামনে থাকতে হবে। আদালতের নির্দেশ মতো বৃহস্পতিবার বাঁশদ্রোনি থানার অফিসার ইনচার্জ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দেহ তুলে দেন দুই পক্ষের হাতে। এরপরই সৎকার সম্পন্ন হয়।
কিন্তু শুধু কী দেখভাল বা আত্মীয় হওয়ার সুবাদে দেহ নিয়ে এই টানাটানি? দীপঙ্করবাবুর পরিচিতরা মনে করছেন, তাঁর ফ্ল্যাট আর সম্পত্তির জন্যই এই টানাটানি। যদিও সম্পত্তি নিয়ে মীমাংসার জন্য আলাদাভাবে সিভিল কোর্টে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেই পুলিশ সূত্রে খবর।
আনন্দপুরের ঘটনায় এই টানাপোড়েনে প্রায় ২ বছর পড়েছিল দেহ। সেখানেও মৃতদেহ সৎকারের টানাপোড়নে কারণ ছিল সম্পত্তি। আত্মীয় ও পরিচারক দুজনেই ছিলেন দাবিদার। উল্লেখ্য, আরও একটি মামলা চলছে কলকাতা হাইকোর্টে। কাটোয়া হাসপাতালে একই সমস্যার জেরে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পড়ে রয়েছে এক বৃদ্ধার দেহ। সম্প্রতি আদালত নির্দেশ দিয়েছে, যাতে অবিলম্বে সৎকার করা হয়।