অগ্নিপথ প্রকল্পের প্রতিবাদে উত্তাল বিহার, জ্বলল ট্রেন, সড়ক অবরোধ, আগুন জ্বলল বিজেপি কার্যালয়ে

মঙ্গলবার ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের পরিকল্পনা ‘অগ্নিপথ’-এর (Agnipath) কথা ঘোষণা করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক (Defense Ministry)। তারপর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছিলেন সেনাবাহিনীতে চাকরি করার স্বপ্ন দেখা বহু মানুষ। সেই অসন্তোষ থেকেই তীব্র বিক্ষোভ শুরু হল বিহারে (Bihar)। রেল ও সড়ক পথ অবরোধ করল বিক্ষোভকারীরা। ট্রেন ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয় প্রতিবাদীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে পুলিশ। অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরোধিতা করে স্লোগানও দেন তাঁরা।

দফায় দফায় বিক্ষোভ চলছে বিহারের বিভিন্ন প্রান্তে। ছাপরায় একটি ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। একটি বাসেও ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে ২২টি ট্রেন বাতিল করল রেল। আরও ছ’টি ট্রেনের গতিপথ বদল করা হয়েছে।

জানা গিয়েছে, গত দু’দিন ধরেই উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে বিহার (Bihar Protest)। একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস চালাচ্ছে পুলিশ। পালটা পুলিশের দিকে পাথর ছোঁড়ে প্রতিবাদীরা। জাহানাবাদ এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে পুলিশ বন্দুক তাক করে পুলিশ। রেললাইনে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন প্রতিবাদীরা। এমনকী রেল লাইনের উপরেই ডন বৈঠক করতে শুরু করেন অনেকে। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁরা কত পরিশ্রম করেছেন, সেই কথা সকলকে বোঝাতে চান তাঁরা। এই বিক্ষোভের কারণে বিহারের ২২টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।

বিক্ষোভকারীদের রোষের মুখে বিজেপি কার্যালয়। নওয়াদা জেলায় বিজেপির কার্যালয় জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আটুয়া রোডের ওই কার্যালয়ের ভিতরে বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে দেন বলে অভিযোগ।

এই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। জেলা বিজেপি সভাপতি সঞ্জয়কুমার মুন্না জানিয়েছেন, আসবাবপত্র, নথি পুড়ে গিয়েছে। কয়েক লাখ টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘যে পদ্ধতিতে প্রতিবাদ প্রদর্শন চলছে, তা ঠিক নয়। চক্রান্ত করে পরিকল্পিত ভাবেই দলীয় কার্যালয়কে নিশানা করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’

প্রসঙ্গত, অগ্নিপথের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা বাহিনীর (Indian Army) তিন বিভাগে চার বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হবে। নিয়োগ করা হবে ৪৫ হাজার তরুণকে, যাদের বয়স ১৭ বছর ৫ মাস থেকে ২১ বছরের মধ্যে। চার বছর হওয়ার পর সব বিভাগের ১০০ শতাংশ সেনার চাকরি চলে যাবে। তারপর তাদের মধ্য থেকে পূর্ণাঙ্গ সময়ের জন্য ২৫ শতাংশ সেনাকে পুনরায় নিযুক্ত করবে সরকার। যাঁদের চাকরি থাকবে না, তাঁদের এককালীন ১১ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ টাকার প্যাকেজ দেওয়া হবে, জানিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। তবে অবসরপ্রাপ্ত সেনাদের মাসিক পেনশন দেওয়া হবে না। স্বল্প মেয়াদি নিয়োগের ফলে সরকারের ৫.২ কোটি টাকা বাঁচবে।

এই কথা জেনেই ক্ষুব্ধ সেনাবাহিনীতে কাজ করতে চাওয়া জনতা। চার বছরের চুক্তিভিত্তিক চাকরির কথা জেনে এখন পিছিয়ে আসতে শুরু করেছেন। অন্য ক্ষেত্রে চাকরি করার কথা ভাবছেন। তাঁদের মতে, চার বছর সেনায় কাজ করে ফের অন্য ধরণের চাকরির জন্য চেষ্টা করতে হবে। অর্থাৎ চার বছর নষ্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve − seven =