কলকাতা সচেতনতা, প্রচার, জরিমানার ভয় দেখানো, পরিদর্শন সবই সার। কলকাতা থেকে শহরতলি প্রকাশ্যেই নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের রমরমা। পুলিশ-প্রশাসনের নাকের ডগাতেই ৭৫ মাইক্রনের চেয়ে পাতলা প্লাস্টিক ব্যবহার হচ্ছে। দিচ্ছেন দোকানিরা, নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। জুলাইয়ের শুরুতে প্লাস্টিক নিয়ে কড়াকড়িতে লোকজনের হাতে কিছুদিন অন্তত বাজারের থলে ফিরেছিল। এখন আবার যে কে সেই অবস্থা!
গত পয়লা জুলাই থেকে ৭৫ মাইক্রনের কম ঘনত্বের প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। পর্ষদের তরফে দেশের প্রতিটি রাজ্য প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল, প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ৭৫ মাইক্রন বা তার বেশি পুরু না হলে ব্যবহার করা যাবে না। জুন মাস থেকে ক্রমাগত প্রচারে জুলাই-এর শুরুতে বাজার ও দোকানে বিক্রেতারা সাফ বলতে শুরু করেছিলেন প্লাস্টিক ব্যাগ হবে না। তবে তা হাতে গোনা কয়েকদিনের জন্য। নজরদারি কমতেই ফুল ফর্মে ফিরেছে ফিনফিনে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ।
উত্তরের শ্যামবাজার থেকে দক্ষিণের যাদবপুর, শহরের প্রায় সর্বত্রই দোকান-বাজারে পাতলা প্লাস্টিকের রমরমা। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বিধি যে মান্যতা পাচ্ছে না, তা স্বীকার করে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দারের সাফাই, ‘কেবল আইন করে কিছু হবে না। মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে সুনির্দিষ্ট নীতি প্রণয়ন করতে হবে।’ অথচ, ৭৫ মাইক্রনের কম ঘনত্বের প্লাস্টিক বা প্লাস্টিকজাত দ্রব্য কেউ যাতে ব্যবহার না করেন, তা নিশ্চিত করতে গত পয়লা জুলাইয়ের আগে থেকেই কলকাতা পুরসভার তরফে প্রচার চালানো হয়েছিল। গত জুন মাসে নিউ মার্কেটে এক প্রচারাভিযানে শামিল হয়ে খোদ মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) জানিয়েছিলেন, ৭৫ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বা প্লাস্টিকজাত দ্রব্য ব্যবহার করলে বিক্রেতাদের ৫০০ টাকা ও ক্রেতাদের ৫০ টাকা করে জরিমানা করা হবে। কিন্তু বাস্তবে চার মাস পরেও মেয়র পারিষদের সেই ঘোষণা স্রেফ কথার কথা হয়েই রয়ে গিয়েছে।
পুরসভার পরিবেশ বিভাগের আধিকারিকদের মতে, জরিমানা চালু না করলে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার কমবে না। যদিও এ বিষয়ে মেয়র পারিষদের (পরিবেশ) যুক্তি, ‘আমরা কত মানুষকে জরিমানা করব? নিষিদ্ধ প্লাস্টিক বাইরের রাজ্য থেকে আসছে। সেখান থেকে যাতে প্লাস্টিকের সরবরাহ বন্ধ হয়, তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার উপযুক্ত পদক্ষেপ করুক। স্রেফ জরিমানা করে এই সমস্যার সমাধান হবে না।’ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের অভিযোগ, ‘৭৫ মাইক্রনের কম ঘনত্বের প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার ঘোষণাটা এখনও খাতায়-কলমেই রয়েছে। প্রশাসন নিশ্চুপ। জনসাধারণও এ বিষয়ে অজ্ঞ।’
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে জানানো হয়েছিল, ৭৫ মাইক্রনের কম ঘনত্বের প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি ক্যারিব্যাগ, র্যাপার, কাপ, প্লেট বা প্যাকেট ব্যবহার করা যাবে না। পুরসভার পরিবেশ বিভাগের আধিকারিকেরাই জানাচ্ছেন, পুজোর মাসে কোনও রকম নিয়মই মানা হয়নি।
যদিও মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপনের আশ্বাস, ‘ছটপুজোর পরে পুরসভা-পুলিশ মিলে শহরের বাজারে বাজারে অভিযান শুরু হবে।’