দলবদল করে সেঞ্চুরি, সহানুভূতি নয় আত্মবিশ্বাসে ভরসা পৃথ্বী শ’র

একসময় তাঁকে ঘিরে ছিল অগাধ আশার পাহাড়। ক্রিকেটবিশ্বে তাঁর তুলনা টানা হত শচীন তেণ্ডুলকরের সঙ্গে। এমনকি রবি শাস্ত্রীও বলেছিলেন— শচীন, ব্রায়ান লারা ও বীরেন্দ্র শেহওয়াগের সংমিশ্রণ যেন এই প্রতিভাবান ওপেনার। কিন্তু সেই উজ্জ্বল সূচনার পর থেকেই ক্রমশ নিম্নমুখী পৃথ্বী শ’র ক্রিকেট কেরিয়ার। একের পর এক বিতর্ক, ফর্মহীনতা, ফিটনেস সমস্যা ও শৃঙ্খলার অভিযোগ তাঁকে ছিটকে দেয় মুম্বই দলের বাইরে। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে দলবদল করেই যেন নতুন করে শুরু করার ইঙ্গিত দিলেন তিনি। মহারাষ্ট্রের হয়ে প্রথম ম্যাচেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ফিরলেন আলোচনায়।

চেন্নাইয়ে চলছে বুচিবাবু টুর্নামেন্ট। সেখানে মহারাষ্ট্রের হয়ে ছত্তিশগড়ের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিলেন পৃথ্বী। কঠিন পিচে দলের টপ অর্ডার যখন টলমল করছে, তখন ব্যাট হাতে দৃঢ়তায় ভরসা জোগান তিনি। ১২২ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন এই ২৫ বছর বয়সি ক্রিকেটার। তাঁর ইনিংসে ছিল ১৪টি বাউন্ডারি। দলের ৪৪তম ওভারে শতরান পূর্ণ করে ব্যাট উঁচিয়ে সেলিব্রেট করেন পৃথ্বী। তাঁর শরীরী ভাষা ও ফিটনেস দেখে বোঝা গিয়েছে, নিজেকে নতুন করে গড়তে কঠোর পরিশ্রম করছেন।

সেঞ্চুরির পর ড্রেসিংরুমে ফিরেই তিনি জানিয়ে দেন নিজের মনের কথা। সাংবাদিকদের উদ্দেশে পৃথ্বী বলেন, “আমি কারও সহানুভূতি চাই না। শূন্য থেকে আবার শুরু করতে একটুও সমস্যা নেই। আমি জীবনে অনেক উত্থান-পতন দেখেছি। বিশ্বাস করি, সবকিছুই সম্ভব। আমি আত্মবিশ্বাসী, সেই বিশ্বাসকেই ধরে রাখতে চাই।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমি কোনও বিরাট পরিবর্তন করছি না। গোড়ার বিষয়গুলোর উপরেই খাটছি। জিমে পরিশ্রম করছি, দৌড়চ্ছি। এভাবেই ১২ বছর বয়স থেকে ক্রিকেট খেলছি। সোশ্যাল মিডিয়া থেকেও দূরে আছি।”

গত মরশুমে প্রায় উপেক্ষিত ছিলেন পৃথ্বী। একাধিক ম্যাচে সুযোগ পাননি। এমনকি মুম্বইয়ের রনজি ও বিজয় হাজারে দল থেকেও বাদ পড়তে হয়েছিল তাঁকে। শৃঙ্খলার অভাব, ফিটনেস নিয়ে উদাসীনতা— এমন অভিযোগ তাঁর কেরিয়ারকে বারবার বিপথে ঠেলে দিয়েছে। অবশেষে চলতি বছরের শুরুতে মুম্বই দল তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। নতুন মরশুমে তাই মহারাষ্ট্রের হয়ে খেলতে নেমেছেন পৃথ্বী। আর প্রথম ম্যাচেই সেঞ্চুরি যেন তাঁর জবাব— এখনও ক্রিকেটীয় দক্ষতা অক্ষুণ্ণ।

এই সেঞ্চুরি নিছক একটি ইনিংস নয়, বরং কেরিয়ারের নতুন মোড়ের প্রতীক। ভারতীয় ক্রিকেটে ওপেনারের জায়গা সবসময়ই প্রতিযোগিতায় ভরপুর। পৃথ্বী জানেন, জাতীয় দলে ফিরতে গেলে আরও অনেক বড় ইনিংস খেলতে হবে। কিন্তু শুরুটা হলো ইতিবাচক। দলবদল করে প্রথম ম্যাচেই শতরান যেন আলাদা আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে তাঁকে।

ক্রিকেট মহল মনে করছে, প্রতিভার ঘাটতি নেই পৃথ্বীর। প্রয়োজন শুধু শৃঙ্খলা, ফিটনেস আর ধারাবাহিক পারফরম্যান্স। তিনি যদি সত্যিই নিজের ফোকাস ধরে রাখতে পারেন, তবে কামব্যাক অসম্ভব নয়। সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সেই সম্ভাবনার দরজা আবারও খুলে দিলেন পৃথ্বী শ’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − twelve =