মোদি মোদি স্লোগানে মুখরিত ক্যাপিটল হিল, মার্কিন কংগ্রেসে ইতিহাস গড়লেন প্রধানমন্ত্রী

মার্কিন কংগ্রেসে বক্তব্য রেখে আমেরিকা সফরে ইতিহাস গড়লেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। এদিন মোদি ক্যাপিটল হিলে প্রবেশ করতেই কার্যত ‘মোদি মোদি’ হর্ষধ্বনিতে ভরে ওঠে চারপাশ। স্ট্যান্ডিং ওভেশন দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীকে। এদিনের অধিবেশনের নেতৃত্বে ছিলেন মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি ও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। স্ট্যান্ডিং ওভেশনের সময় উঠে দাঁড়ান তাঁরাও। আজ পর্যন্ত কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মার্কিন কংগ্রেসে দু’বার বক্তব্য রাখার সুযোগ পাননি। সারা বিশ্বে এই নজির গড়েছেন নেলসন ম্যান্ডেলা, বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, উইনস্টন চার্চিল।

আমেরিকার কংগ্রেসে বক্তৃতা করার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাত বছর আগেও আমি এখানে দাঁড়িয়েছিলাম। গত সাত বছরে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। এখন আমরা যুগের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। নতুন সময়ের বিষয়টি মাথায় রেখে ভারতের হয়ে কথা বলতে এসেছি।’ ভারতের উন্নতি হলে উন্নতি হবে সমগ্র বিশ্বের। আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে এমনই মন্তব্য করেন মোদি। আমেরিকান কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে বক্তৃতা দেওয়ার সময় বৃহস্পতিবার সেই মঞ্চেই ভাষণ দিতে দেখা গেল তাঁকে। গাইতে শোনা গেল ভারতের উন্নতি এবং আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের জয়গান। যৌথ অধিবেশনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মোদি গণতন্ত্র নিয়েও কথা বলেন। জানান, মনুষ্যত্বের পরিচয় পাওয়া যায় গণতন্ত্রের চেতনা থেকে। গণতন্ত্রের ধারণা বিশ্বের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে।

এদিন মোদির ভাষণে গণতন্ত্র থেকে করোনা টিকা, মঙ্গল অভিযান থেকে অর্থনীতি— নানা বিষয়ই উঠে আসে। সরস ভঙ্গিতে এদিন তাঁর বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। শোনান নিজের লেখা কবিতাও। ‘সামোসা ককাস’ বলে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিসের সঙ্গে রসিকতাও করেন। পাশাপাশি তুলে ধরেন ভারতের অগ্রগতির কথাও। তিনি বলেন, ‘ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। এবং আমরা শিগগিরি তৃতীয় বৃহত্তম হতে চলেছি।’

কেবল ভারত নয়, গোটা বিশ্বের ঐক্যের কথাও বলেন মোদি। মনে করিয়ে দেন, ‘বসুধৈব কুটুম্বকমে’র কথা। যার অর্থ ‘এই বিশ্ব এক পরিবার।’ বলেন, ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার এক ভবিষ্যৎ।’ পরিবেশরক্ষার বার্তাও দেন। দূষণরোধে ‘গ্রিন এনার্জি’র গুরুত্বের কথাও তুলে ধরেন। এরই পাশাপাশি আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেন মোদি। জানিয়ে দেন, ওয়াশিংটন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। নাম না করেই চিনকেও আক্রমণ করেন মোদি। প্রধানমন্ত্রী খোঁচা দেন পাকিস্তানকেও। ৯/১১-র দু’দশকের কথা বলতে গিয়ে মুম্বই হামলার উল্লেখ করে ইসলামাবাদকে কাঠগড়ায় তোলেন তিনি। এরই পাশাপাশি রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের আহ্বানও জানান তিনি।

দেশের বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের কথা বলতে গিয়ে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘ভারতে ২২টি সরকারি ভাষা রয়েছে। কিন্তু আমরা কথা বলি এক স্বরে। এদেশে আড়াই হাজার রাজনৈতিক দল রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি দল বিভিন্ন রাজ্য শাসন করে। এটাই এদেশের গণতন্ত্র।’ করোনা টিকার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন, দেশের ৫০ কোটি মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবার কথাও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × five =