পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আংটি কাণ্ডে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের সুপারকে তীব্র ভর্ৎসনা করতে দেখা গেল আদালতকে। কারণ, জেল ম্যানুয়্যাল অনুযায়ী, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আংটি খোলা হয়নি কেন তা নিয়ে বুধবার বিচারক প্রেসিডেন্সি জেল সুপারের কাছে জানতে তাঁকে তলব করা হয় ব্যাংকশাল আদালতে। আর আদালতে হাজিরা দেওয়ার পরই বিচারকের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় জেল সুপারকে।
এদিকে আদালত সূত্রে খবর, এদিন প্রেসিডেন্সির সুপারের বিরুদ্ধে আদালতে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ আনে ইডি। ইডির আইনজীবীরা দাবি করেন, গরু পাচার থেকে কয়লা পাচার, নিয়োগ দুর্নীতি সমস্ত ক্ষেত্রেই অভিযুক্তদের উনি প্রোটেকশন দিয়ে আসছেন। প্রসঙ্গত, এর আগে হাইকোর্টের নির্দেশ লঙ্ঘন করায় জরিমানাও দিতে হয়েছে। ২০১৮ তে সেন্সর করেছিল রাজ্য। তার বিরুদ্ধে উনি স্যাটে যান। পাশাপাশি ডিআইজি প্রোমোশনও চেয়েছিলেন। এদিকে এই ব্যক্তি বিকাশ মিশ্রর মতো অভিযুক্তর ক্ষেত্রে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশ অমান্য করেছেন। আর এখানেই ইডি-র দাবি, ওঁনার পিছনে কোনও অদৃশ্য হাত আছে। তাই এত ভুল করার পরও ওঁনাকে সরানো হয়নি।
ইডির অভিযোগ শুনে জেল সুপারকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন বিচারকও। শুরুতেই সুপারের কাছে সংশোধনাগারের রেজিস্ট্রার দেখতে চান বিচারক। বিচারক জানতে চান, কোন কারণে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আংটি খোলা হয়নি তা নিয়ে। জবাবে সুপার জানান, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আঙুল ফোলা ছিল। সেই কারণে আংটি খোলা যায়নি। উনি সেজন্য দরখাস্তও করেছিলেন। সুপারের জবাব শুনে বিচারক জানতে চান, জেলে এই ধরনের কোনও নিয়ম আছে কি না তা নিয়েও। জেল কোডে এমন দরখাস্ত দেওয়া আইনসম্মত কি না তাও জানতে চান বিচারক।উত্তরে সুপার জানান, ‘না এমন নেই। তবে আংটি খোলার চেষ্টা করা হয়েছিল।‘
এই উত্তর শুনে মেজাজ হারান বিচারক। প্রশ্ন করেন, তাহলে কেন এবার খোলা হল তা নিয়েও। জবাবে সুপার জানান, ‘খোলার সময় আঙুল ছড়ে গেছে। স্কিনের ক্ষতি হোক আমরা চাইনি।‘ সুপারের এই বক্তব্য শুনে বিচারক হুঁশিয়ারির সুরে স্পষ্ট জানান, ‘এটা ভাববেন না যে আপনারা যে দেখাচ্ছেন তাই আমরা শুধু দেখছি। আমরা পুরোটাই দেখতে পাই। সাবধান হোন।’ এই প্রসঙ্গে বিচারক এও জানতে চান, ‘যেটা ৯ মাসে খোলা গেল না, সেটা ৯ দিনে খুলে গেল তা কি করে হয়।‘ এরই রেশ ধরে বিচারক ভর্ৎসনার সুরে এ প্রশ্নও করেন, ‘আপনি নিজেকে ‘জেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ মনে করছেন? আপনি আইনের ব্যাখ্যা নিজের মতও করে ফেলছেন।’ এরপরই ঠিক কী কারণে পার্থর আংটি খোলা যায়নি, তার লিখিত ব্যাখ্যাও চান বিচারক। এরপর জেল সুপার বিচারককে আশ্বস্ত করেন যে, তিনি তাঁর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন।