নিজস্ব প্রতিবেদন, পুরুলিয়া: রাজ্যের অন্যতম তথা পুরুলিয়ার সেরা মৌতড়ের মা বড়কালী পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে জোরকদমেই। মা বড়কালীর পুজোর দিকে নজর জেলার এমনকি পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডের বহু ভক্তের। এই কালীপুজোর বৈশিষ্ট্য হল বলিদান। এখানে পুজোর রাত থেকে শুরু হয় বলি। চলে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত। পাশাপাশি সারা বছর ধরে মায়ের নিমিত্তে ছাগ, ভেড়া বলিদান করা হয়ে থাকে এই মৌতড়ের মা বড়কালীর মন্দিরে।
কালীঘাট মন্দিরের আদলে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ২ নম্বর ব্লকের শতাধীপ্রাচীন মৌতড় কালীমন্দির সাজিয়ে তোলা হয়েছে ইতিমধ্যে। এবার দর্শনার্থীদের সমাগম অন্যান্য বছরগুলির ন্যায় রেকর্ড করবে বলে আশাবাদী উৎসব কমিটি। এই পুজো রাজ্যের অন্যতম তথা জেলার সব থেকে বড় প্রাচীন পুজো। নতুনভাবে কালীঘাট মন্দিরের আদলে কয়েক বছর আগে মন্দির তৈরি হওয়ায় মৌতড় গ্রামের এই পুজো এবার অন্য মাত্রা পেতে চলেছে। মৌতড় ষোলআনা, উৎসব কমিটি ও গ্রামের তরুণ সংঘের মিলিত উদ্যোগে এই মন্দির সংস্কার হয়েছে।
এলাকার জনশ্রুতি ও মৌতড় গ্রামের পুজো নিয়ে লেখা কিছু বইতে উল্লেখ করা তথ্য অনুযায়ী, কয়েক শতাধি আগে গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বনাথ ভট্টাচার্যের জামাই সাধক শোভারাম বন্দ্যোপাধ্যায় মৌতড় গ্রামে কালীপুজো শুরু করেছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা তথা লোক গবেষক সুভাষ রায় জানান, মৌতড় গ্রামের কালীপুজো ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছিল সে বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্যের অভাব রয়েছে। তবে জানা যায় বর্ধমানের বাসিন্দা শোভারাম বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন মৌতড় গ্রামের বিশ্বনাথ ভট্টাচার্যর। শোভারাম মৌতড় গ্রামেই থেকে গিয়েছিলেন। সাধক প্রকৃতির শোভারাম দিনেরাতে এলাকার শ্মশানে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন। পঞ্চমুন্ডির আসন প্রতিষ্ঠা করে তিনি পুজোপাঠ শুরু করেন। পরে ওই জায়গাতেই মন্দির গড়ে ওঠে। তন্ত্রমতে সিদ্ধ এই পঞ্চমুন্ভি র আসনটি বর্তমানে মন্দিরের নীচে রয়েছে বলে দাবি পুজো উদ্যোক্তাদের।
এই পুজো হয় কার্তিক মাসের অমাবস্যায়। দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীর পরদিন থেকে সাধারণত শুরু হয়ে যায এই পূজার প্রস্তুতি। সেই রেশ চলে ভাতৃদ্বিতীয়ার দিন পর্যন্ত। বংশানুক্রমে এ মন্দিরের পৌরহিত্য করে আসছেন সনৎ বন্দ্যোপাধ্যায়রা। সনৎবাবুর কথায়, মানুষ বিশ্বাস করে পূজা দেন। মানত পূর্ণ হয়। মন্দিরে এখনও রয়েছে শতাধিক বছরের পুরনো পুঁথি। সেই পুঁথি অনুযায়ী পুজো হয়। ™ুজোর সময়ে সেই পুঁথিপাঠ করা হয়।
সব কমিটির সেক্রেটারি তথা মায়ের সেবাইত পার্থসারথি ভট্টাচার্য জানান, ইতিমধ্যেই মৌতড়ের মা বড়কালী পুজো উপলক্ষে মেলায় ভিড় সামাল দিতে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে রঘুনাথপুর থানার আইসি, এসডিপিও সহ পুলিশ কর্তারা মেলা প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেছেন। কয়েকদিনের মধ্যেই পুরুলিয়ার পুলিশ সুপারের মেলা প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করার কথা রয়েছে।