সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, অন্ডাল: পয়লা জুন থেকে দেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ৭৫ মাইক্রোনের নীচে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ সহ থার্মোকল দিয়ে তৈরি সামগ্রীর ব্যবহার। ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে প্লাস্টিক ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে প্রশাসন থেকে নেওয়া হয়েছে একাধিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি। বিভিন্ন বাজারে চালানো হচ্ছে অভিযান। কিন্তু সব ক্ষেত্রে যে নিয়ম মানা হচ্ছে তা নয়। এমনই ছবি চোখে পড়ল উখড়ার চুনারিপাড়ায়। পাড়াটি ডাক শিল্পী পাড়া হিসেবে পরিচিত। এখানে বসবাসকারী পরিবারের সদস্যরা কম বেশি প্রত্যেকেই প্রতিমার ডাক তৈরির কাজের সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন প্রতিমার ডাক ও চাঁদ মালা সহ অন্যান্য উপকরণ তাঁরা তৈরি করেন বছরভর। এতদিন এইসব জিনিস তৈরির মূল উপকরণ ছিল শোল। এইজন্য এই শিল্পটিকে বলা হয় ‘শোলা শিল্প’। এই শোল সাধারণত পুকুরে জন্মায়। কিন্তু বর্তমানে সেই সব পুকুরের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এই শোল খুব একটা পাওয়া যায় না। কোথাও কোথাও কিনতে পাওয়া গেলেও তার দাম অনেক বেশি। তাই বেশ কয়েক বছর ধরে প্রতিমার ডাক ও চাঁদ মালা তৈরির কাজে শোলের পরিবর্তে শিল্পীরা ব্যবহার করেন থার্মোকল। এটি বাজারে সহজে ও সুলভে পাওয়া যায়। কিন্তু পয়লা জুন থেকে থার্মোকলের ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও শিল্পীরা থার্মোকল ব্যবহার করেই প্রতিমার ডাক ও চাঁদ মালা তৈরি করছেন বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় কেউ জেনে আবার কেউ না জেনেই এই কাজ করছেন। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক শিল্পী জানান,থার্মোকল ব্যবহার বন্ধ করলে ডাক শিল্পটাই বন্ধ হয়ে যাবে। বর্তমানে এই ডাক শিল্প ধীরে ধীরে লুপ্ত হতে বসেছে। কারণ আগের মতো পুকুরে শোল পাওয়া যায় না। যোগানের অভাবে শোলের দাম অনেক বেশি। তাই নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও থার্মোকল ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি। তবে সিংহভাগ শিল্পী জানান থার্মোকল ব্যবহার করা যাবে না এরকম নিয়মের কথা তাঁরা জানতেন না। এ বিষয়ে দুর্গাপুরের মহাকুমাশাসক সৌরভ চট্টোপাধ্যায় জানান, প্রতিমার ডাক তৈরির কাজে থার্মোকলের ব্যবহারের কথাটি জানার পর পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের একটি প্রতিনিধি দল সেখানে পাঠানো হয়েছিল। থার্মোকল ব্যবহার না করার জন্য শিল্পীদের সতর্ক করা হয়েছে। শিল্পীরা প্রতিনিধি দলের সদস্যদের কথা দিয়েছেন তাঁরা আর থার্মোকল ব্যবহার করবেন না।