বেসরকারি স্কুলে বাংলা শিক্ষিকাকে ছাঁটাই নিয়ে সরব কুণাল এবং নৃসিংহপ্রসাদ

বাংলা পড়ার ছাত্র নেই স্কুলে, তাই বাংলার শিক্ষিকাকে স্কুলে আসতে মানা করে দেয় আড়িয়াদহের একটি বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। এলাকার লোকজনও অত্যন্ত খারাপ চোখেই দেখছেন এই বিষয়টি। ঘটনার নিন্দায় এবার মুখ খুলতে দেখা গেল রাজনৈতিকমহল থেকে শিক্ষাবিদদের।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানান, ‘যে বেসরকারি স্কুলটি এই কাণ্ড করেছে, হয়ত তাদের কোনও কারণে কাউকে চিঠি দেওয়া দরকার ছিল বা কোনও পদক্ষেপ করা দরকার ছিল। তা বলে বাংলায় দাঁড়িয়ে বাংলা ভাষা শেখার লোক নেই, বাংলা ভাষার চাহিদা নেই, এমন বলা যায় না।’ একইসঙ্গে প্রশ্ন তোলেন স্কুলের ম্যানেজমেন্টের চিঠির ভাষা নিয়েও। পাশাপাশি এ প্রশ্নও তৃণমূল মুখপাত্র তোলেন, বাংলা কেন পড়বে না সে ব্যাপারেও। এক্ষেত্রে কুণালের পরামর্শ, কোনওভাবে যদি বাংলার পড়ুয়া কমতেও থাকে, সেই স্টুডেন্ট বাড়ানোটাও তো সেই স্কুলেরই ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব। একইসঙ্গে কুণাল এও জানান, ‘যে বেসরকারি স্কুল এই কীর্তি করেছে, তারা কোনও অবস্থায় ঠিক কাজ করেনি। যেখানে আমরা আরও বেশি করে বাংলাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাইছি। নিশ্চিতভাবে ইংরাজি থাকবে, যারা হিন্দি পড়ে পড়বে, যে ভাষা পড়ে পড়বে। কিন্তু বাংলা শেখার আগ্রহ নেই বা ছাত্র নেই বলে বাংলার শিক্ষক বা শিক্ষিকাকে আমি কর্মচ্যুত করব এটা সমর্থনযোগ্য নয়।’
অন্যদিকে শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি প্রশ্ন তোলেন, একজন শিক্ষিকাকে এমনটা বলা যায় কি না তা নিয়ে। সঙ্গে এ প্রশ্নও তোলেন, তাহলে কেন এক সময় তাঁকে নেওযা হয়েছিল। সঙ্গে এও জানান, ‘নিশ্চয়ই বাংলা শেখার লোক আছে। কিছু কম পড়েছে সেটা হতে পারে। কিন্তু তাই বলে সুযোগটাই নষ্ট করে দেওয়া ঠিক নয়। একটা স্কুলে সবরকম ব্যবস্থাই থাকা উচিত।’ একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘আমি তো মনে করি হিন্দি প্রোমোট করার জন্য এটা করছেন। প্রাইভেট স্কুল কলেজে এটা হয়। যেটায় আমার পয়সা হচ্ছে না, অতএব সেটা ছেঁটে দাও। কিন্তু সব তো এত ব্যবসায়িক দিক থেকে দেখলে চলে না। অবধারিতভাবে বলে মনে করি এটায় অন্যায় হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, ‘বাংলা ভাষার কোনও অস্তিত্ব নেই’, বাংলা শিক্ষিকার বরখাস্ত পত্রে ঠিক এই মন্তব্যই করেছিল আড়িয়াদহ নওদাপাড়া হোলি চাইল্ড স্কুল। আর সেই ছবির স্ক্রিনশটই রীতিমতো ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। মাতৃভাষাকে অপমান করার জন্য স্কুলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় নেটিজেনদের একাংশকে। এরপর এই গোটা ঘটনায় মুখ খোলেন স্কুলের সেক্রেটারি কমলেশ বসু। বাংলা শিক্ষিকাকে অপসারিত করার সময় যে চিঠি তাঁকে দেওয়া হয়েছিল তা লিখেছিলেন তিনি। আর সেক্ষেত্রে অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল লিখে ফেলেছিলেন, জানান কমলেশবাবু। তিনি জানান, তাঁর কথায়, ‘স্টুডেন্ট’ শব্দটি ভুলবশত বাদ চলে গিয়েছিল। তিনি লিখতে চেয়েছিলেন, ‘বাংলা ভাষার ছাত্র একেবারেই কম।’ একইসঙ্গে তিনি এও স্বীকার করে নেন যে, এমন একটি শব্দ যদি বাদ যায় সেক্ষেত্রে বাক্যের মানে বদলে যায়। আমি শারীরিক কারণে বা অন্য কোনও কারণে এই অনিচ্ছাকৃত ভুল করে ফেলেছি। এই শিক্ষিকা আমার কন্যাসম। তিনি আমার সঙ্গে গুরুজন হিসেবে কথাও বলতে পারতেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন করে অপর একটি চিঠি তাঁকে পাঠিয়েছি। তাতে ‘স্টুডেন্ট’ শব্দটি লেখা।’ পাশাপাশি তিনি এও জানান, ‘স্কুলে সেভাবে বাংলার ছাত্র নেই। হয়তো হাতে গোনা তিন থেকে চার জন। তাই বাংলার শিক্ষিকাকে আমরা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমার কোনও ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমা চাইছি। তবে যে কোনও মানুষেরই ভুল হয়। আমরা তো সকলেই ১০০-য় ১০০ পায় না। আমি নিজে রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র। আমি বাঙালি হয়ে কেন বাঙালি সম্প্রদায়কে অপমান করব! তার থেকে ভালো আমার মৃত্যু হোক।’ একইসঙ্গে চাকরি যাওয়ার রাগে এবং দুঃখেই এই চিঠি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করেন স্কুলের শিক্ষিকা, এই মন্তব্যও করতে শোনা যায় তাঁকে। কমলেশবাবুর আরও দাবি, মঙ্গলবারই ওই শিক্ষিকাকে ফের স্কুলে ডাকা হত। কারণ কিছু পড়ুয়া যারা বাংলাকে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে নিতে চায় তাদের ভর্তি হওয়ার কথা ছিল। সেই কারণেই ওই পড়ুয়াকে ফের ডাকা হত বলে মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর সংযোজন, ‘আমাদের স্কুলে একেবারে কোনও ছাত্র না থাকলে কোনও বিষয়ের শিক্ষককে বসিয়ে বসিয়ে বেতন দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

six − five =