থানার কালীপুজোতে ছাগবলি প্রথা ভাঙতে অপারগ পুলিশ!

নিজস্ব প্রতিবেদন, পুরুলিয়া: থানার কালীপুজোয় এবারেও বলিপ্রথা অব্যাহত, এবারও যা ভাঙতে পারল না পুলিশ! পুরুলিয়ায় অলিখিত নিয়ম অনুসারে সমস্ত থানাতেই করা হয় কালীপুজো। শ্যামার আরাধনার জন্য থানার পিছনে বা সামনেই প্যান্ডেল করে বা মন্দিরে পুজোয় সামিল হন ওসিরা। থানায় থানায় ওসিদের নামেই হয় সংকল্প। ওসিরা তাই কালীপুজোর দিনে খাকি উর্দি ছেড়ে অস্ত্রবিরতি করে সার্ভিস রিভলবার আগ্নেয়াস্ত্র জমা রেখে উপবাস থেকে ধুতি গেঞ্জি উত্তরীয় গায়ে দিয়ে পণ্ডিত মশাইয়ের পাশে বসে হোমযজ্ঞে আহুতি দেন। পশুবলি নিষিদ্ধ হলেও অবাধে চলে ছাগবলি। অন্য ক্ষেত্রে বলির বিরুদ্ধে পুলিশ যতই পদক্ষেপ করুক না কেন, থানার কল্যাণে ছাগবলির রেওয়াজ কিন্তু এবারের পুজোতেও ভাঙতে পারলেন না স্বয়ং ওসিরা। যার ফলে এবারেও কালীপুজোয় পুরুলিয়ার নিতুরিয়া, কেন্দা, সাঁতুড়ি থানায় বলি হল ছাগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ওসি জানালেন, থানার কালীপুজোয় ছাগ বলি অতীত দিনের ঐতিহ্য। তাই নিয়ম মেনে বলি দিতেই হয়। এবারেও তার অন্যথা হয়নি।
হাজার হাজার ছাগ সহ একাধিক মোষ বলি হল পুরুলিয়া তথা জেলার সব থেকে বড় জনপ্রিয় বিজেপির মৌতড়ের বড়মা কালীপুজোয়। প্রাচীন এই পুজোয় মনস্কামনা পূরণের আশায় হাজির হয়েছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থীরা। এবারের এই পুজোয় পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিল। তবে মায়ের পুজোর কোনও খামতি ছিল না। অন্যান্য বারের থেকে এবার মৌতড়ের মা বড়কালীর পুজোয় মানুষের জমায়েত হয়েছিল অনেকটাই বেশি। এবার লক্ষাধিকের থেকেও মানুষের সমাগম হয়েছিল। এবার এসেছিল আসানসোল ও বর্ধমান থেকে প্রচুর দর্শনার্থী। বর্ধমানের মেমারি থেকে আগত দর্শনার্থী রোহিত, বিবেক চট্টোপাধ্যায় সহ অনেকেই জানান, তাঁরা এত বড় পুজো এই প্রথমবার দেখলেন। এছাড়া তাঁরা হতবাক হয়েছেন এত সংখ্যায় পশু বলি দেওয়ার ঘটনা স্বচক্ষে দেখে। মন্দির প্রাঙ্গণে ব্যাপক সংখ্যায় ভিড় সামালাতে গ্রামবাসীদের সঙ্গে স্থানীয় ক্লাব ও প্রশাসনের সঙ্গে ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্য কর্মীরাও।
পুজোর সময় ভিড় সামলাতে তেমন সমস্যা না দেখা দিলেও, পুজোর রাত বারোটা থেকে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত চলা পশুবলি দেখতে মানুষের আবেগের বাঁধ ভেঙেছিল বলির সময়। ভিড় সামলাতে হাঁড়িকাঠের চারদিকে দেওয়া হয়েছিল লোহার শক্ত মজবুত বেড়া। মৌতড়ের কালীপূজার দিনই যে কেবলমাত্র পশুবলি হয় এমনটা নয়। এই কালীপুজোতে বারো মাসে একদিন বাদে বছরের সব দিনই এখানে দেবীর উদ্দেশ্যে ছাগ উৎসর্গ করা হয়। শুধু দুর্গাপূজার অষ্টমীর দিন বলি হয় না এখানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − 15 =