একের পর এক নির্দেশ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ওপর আসছে কলকাতা হাইকোর্টের তরফ থেকে। আর এই ধরনের ঘটনা খুব বেশি ঘটতে থাকলে নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষ যে আস্থা হারাবে এমনটাই মনে করেন প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছিলেন তৎকালীন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। এই ইস্যুতে বিবাদ তৈরি হয়েছিল রাজ্য সরকারের সঙ্গেও। মাঝে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়নি একবার। ফলে ১০ বছর পর আরও একটা পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর এবার আদালত নির্দেশ দেওয়ার পরও কেন কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হল না, তা নিয়ে ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় কমিশনকে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন কতটা তা নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত আইএএস মীরা পাণ্ডে জানান, ‘সুষ্ঠভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে কোথায় কত বাহিনী লাগবে, তা নির্বাচন কমিশনকে ঠিক করে নিতে হয়। যে কোনও নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য বলে উল্লেখ করেন তিনি।‘ এরই পাশাপাশি মীরা পাণ্ডের সংযোজন, ‘সুষ্ঠ নির্বাচন করাতে গেলে শুধু বুথে নয়, অনেক জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনী রাখতে হয়। রাজ্যে পর্যাপ্ত পুলিশ আছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে একদিনে ভোট হচ্ছে, তাই বাহিনী তো বেশি লাগবেই।‘ সঙ্গে এও উল্লেখ করেন, ‘১০০ শতাংশ পুলিশকে ভোটের কাজে লাগানো যায় না। রাজ্যের সার্বিক আইন শৃঙ্খলার জন্য পুলিশ রেখে তবেই ভোটের দায়িত্ব দেওয়া যায়। তাই সেক্ষেত্রে পুলিশ ভোটের জন্য যথেষ্ট না হতে পারে। এই অবস্থায় ভিন রাজ্যের পুলিশ বা কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত কমিশনকে নিতে হয়।’
পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত বিরোধীদের করা মামলায় হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে অবিলম্বে। এদিকে আদালতের এই নির্দেশের পর নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা জানান, ‘স্পর্শকাতর এলাকা চিহ্নিত করা হয়নি এখনও।‘ আর এই প্রসঙ্গে প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডে জানান, স্পর্শকাতর এলাকা চিহ্নিত করতে হয় মনোনয়ন পেশের আগে। তবে যেভাবে বারবার আদালতকে নির্দেশ দিতে হচ্ছে, তাতে কমিশনের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা হারাতে দেখলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। একইসঙ্গে এও মনে করিয়ে দেন, ‘এটা ঠিক যে কমিশন একটি স্বতন্ত্র সাংবিধানিক সংস্থা। তাই তার উপর সাধারণ মানুষের আস্থা থাকা দরকার। সেটা চলে গেলে তা দুর্ভাগ্যজনক।‘
এখানে আমাদের অবশ্য একটা মনে রাখতেই হবে, ২০১৩ সালে মীরা পাণ্ডে কমিশনার থাকাকালীন পাঁচ দফায় হয়েছিল পঞ্চায়েত নির্বাচন। কমিশনের সঙ্গে সরকারের আইনি লড়াই সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল। হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দিলেও, তা ডিভিশন বেঞ্চে খারিজ হয়ে যায়। পরে সুপ্রিম কোর্টে যায় কমিশন। সুপ্রিম কোর্টে একদিনেই সেই মামলার নিষ্পত্তি হয়ে যায়। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে সেবার কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল।