নিয়োগ দুর্নীতির কিংপিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। দীর্ঘ ৯ মাস পর আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায় ও তাঁর আইনজীবীর। একইসঙ্গে অর্পিতা এদিন আদালতে এও জানান, সংস্থার সব কাজ হত পার্থর বাড়িতে। বেলঘড়িয়ার ফ্ল্যাটে অনন্ত টেক্সফ্যাবের অফিস ছিল। সেই কোম্পানির শেয়ার ট্রান্সফারের জন্য ব্যবহার করা হয়। আর ওই সংস্থার সব ক্ষমতা পার্থর হাতেই ছিল বলেও জানান অর্পিতা। আদালত সূত্রে খবর, এদিন সিবিআই আদালতে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের জামিনের আবেদনের শুনানি হয়। শুনানিতে অর্পিতার হয়ে জোর সওয়াল করতে দেখা যায় অর্পিতার আইনজীবীকে। এই ঘটনায় অর্পিতার আদতে যে কোনও ভূমিকাই নেই তাও নানা প্রসঙ্গে তুলেও ধরেন তিনি। তবে বিচারক এদিন এই মামলার কোনও রায় দেননি। এই রায় শোনানো হবে আগামী বুধবার ৩১ মে।
এদিনের শুনানিতে নিয়োগ দুর্নীতি প্রসঙ্গে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায় ও তাঁর আইনজীবী। বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট অনন্ত টেক্সফ্যাবের রেজিস্টারর্ড অফিস প্রসঙ্গে অর্পিতা এদিন আদালতে জানান, ‘বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট অনন্ত টেক্সফ্যাবের রেজিস্টারর্ড অফিস ছিল।’ আর এখানেই অর্পিতার প্রশ্ন, তাঁর সাথে অনন্ত টেক্সফ্যাবের সম্পর্ক কোথায় তা নিয়েও। সঙ্গে তিনি এও জানান, ‘আমাকে ব্যবহার করা হয়েছিল অনন্ত টেক্সফ্যাবের শেয়ার ট্রান্সফার করার জন্য। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রীর মৃত্যুর পর মেয়ে বিদেশে থাকায় এটা করা হয়। পার্থ-ঘনিষ্ঠ একজন জোর করে এটা করেছিল।‘
তাঁর ফ্ল্যাট থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধারের ঘটনায় অর্পিতা এদিন বলেন, ‘বিভিন্ন সংস্থায় থাকা টাকা পার্থর, আমার নয়। ইডি-র তদন্তও একই কথা বলছে। নগদ আর গয়না যেগুলি উদ্ধার হয়েছে সেগুলিও অনন্ত টেক্সফ্যাবের। এটাও ইডি-র তদন্তে সামনে এসেছে। ওই সংস্থার ১০০ শতাংশ শেয়ার হোল্ডার পার্থর পরিবারের হাতেই ছিল, সেটা মনোজ জৈনও বলেছেন। এই সব সংস্থার সব কাজও হত পার্থর বাড়িতে।‘
এই প্রসঙ্গ টেনেই এদিন আদালতে অর্পিতার দাবি, ‘এটা যদি দাবা খেলা হয় তাহলে তার রাজা কে সেটা স্পষ্ট। আমার বয়স্ক মা রয়েছেন ফলে আমার পালানোর সম্ভাবনা নেই।’
এরপরই অর্পিতার এই বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে এবং অন্যান্য মামলার প্রসঙ্গ টেনে তাঁর আইনজীবী আদালতে এও জানতে চান, ‘আমার মক্কেল বেনিফিসারি ছিল না। কামাল সিং ভূতোরিয়া, মৃন্ময় মালাকার, মনোজ জৈন বিভিন্ন সংস্থার ডিরেক্টর হয়েছিল। কিন্তু এদের ছাড় দেওয়া হল। তাহলে আমার মক্কেলের ক্ষেত্রে সেটা হল না কেন?’ এই সব প্রসঙ্গ টেনে এনে অর্পিতার আইনজীবী জোরালো জামিনের আবেদনও জানান আদালতে।
তবে ইডি-র তরফ থেকে আইনজীবী অর্পিতার এই জামিনের আর্জির বিরোধিতা করেন এবং জানান, গ্রেপ্তারের আগে বয়স্ক মায়ের সঙ্গে যে অর্পিতার যোগাযোগ ছিল না। পাশাপাশি ইডি-র আইনজীবী এও জানান, ‘ওনারা বলছে পার্থই কিং। কিন্তু ওনাকেই ঠিক করতে হবে উনি ডিফেক্ট রানি নাকি পার্থকে কাকু বলবেন। পাশাপাশি এলআইসি-র প্রসঙ্গ টেনে এনে ইডি-র আইনজীবী এও বলেন, পার্থ ও অর্পিতার মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু এলআইসি ফর্মে সই করেছেন অর্পিতা। সেখানে পার্থকে কাকু দেখানো হয়েছে।
এরই পাশাপাশি ইডি-র আইনজীবী এও জানান, গ্রেপ্তারের আগে অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে যে বিপুল টাকা ও গয়না মিলেছিল, তখন অর্পিতা তার কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। আর এখানেই ইডি-র আইনজীবীর প্রশ্ন, অর্পিতা দুর্নীতিতে যুক্ত না হলে ওই টাকা তাঁর ফ্ল্যাটে কিভালে গেল, ঘনিষ্ঠ কেউ না হলে কেউ ফ্ল্যাটের চাবি কেন দেবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। পার্থর উদ্ধৃতি তুলে ধরে ইডি আইনজীবী আরও বলেন, ‘২০১২ থেকে বোলপুরে পার্থ-অর্পিতার সম্পত্তি রয়েছে। সে ব্যাপারে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বলেছেন তিনি কিছু জানেন না, অর্পিতা জানেন।’ অর্পিতাকে ফাঁসানোর দাবি খারিজ করে ইডি-র পাল্টা যুক্তি, ‘উনি বলছেন, জোর করে যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তার জন্য কোনও অভিযোগ কোথাও করেছিলেন কি? উনি আসলে ওই জীবনযাত্রা ভোগ করেছেন। ফলে অর্পিতাও ‘একই দোষে দুষ্ট’।
এদিন বিচারক দু-পক্ষের সওয়াল জবাব শোনেন এবং অর্পিতার জামিনের রায়দান আপাতত স্থগিত রাখেন।