পার্থ ‘প্রভাবশালী’, হাইকোর্টে পরপর কারণ দেখিয়ে জামিনের বিরোধিতা ইডির

রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিনের বিরোধিতায় ‘প্রভাবশালী’ তত্ত্বকেই খাড়া করল ইডি। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত পার্থের জামিনের মামলার শুনানি ছিল বৃহস্পতিবার। এদিন কলকাতার নগর দায়রা আদালতে হাজির করানো হয় তাঁকে। শুনানি চলাকালীন ইডি এদিনও দাবি করে, পার্থ রাজ্যের এক জন ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তিত্ব। পার্থ রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে একা হাতে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাই তাঁর কোনও মতেই জামিন পাওয়া উচিত নয়।
পার্থ যে প্রভাবশালী, সেই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য পাঁচ যুক্তিও আদালতে দিয়েছেন ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি। কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়, গ্রেপ্তারির পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেছিলেন পার্থ। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ফোন ধরেননি। ‘প্রভাবশালী’ না হলে কেউ সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করতে পারেন না। দ্বিতীয়ত, পার্থের গ্রেপ্তারির মেমোতে পার্থকে মুখ্যমন্ত্রীর আত্মীয় বলে উল্লেখ করা রয়েছে। তিনি যদি প্রভাবশালী না হতেন, তা হলে এমন উল্লেখ থাকত না বলে দাবি করে ইডি। এছাড়াও গ্রেপ্তারির পর অসুস্থতার কারণে পার্থকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু আদালতে ইডি দাবি করেছে, পার্থ আদপে অসুস্থ ছিলেন না। ইডির যুক্তি, হাই কোর্টের নির্দেশে পার্থকে ভুবনেশ্বর এইমসে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকেরা পার্থের শরীরে অসুস্থতার কোনও ছাপ পাননি। সুতরাং এটা স্পষ্ট, গ্রেপ্তারি এড়াতে পার্থ অসুস্থতার ‘ভান’ করেছিলেন। আর তিনি প্রভাবশালী বলেই এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হতে পেরেছিলেন।
এরপরই আসে আংটি প্রসঙ্গ। ‘জেল কোড’ অনুযায়ী সংশোধনাগারে কোনও বন্দির আংটি পরার অনুমতি নেই। কিন্তু পার্থ দীর্ঘ দিন জেলের মধ্যে আংটি পরেছিলেন। ইডির যুক্তি, তিনি প্রভাবশালী হওয়ার কারণেই এমনটা সম্ভব হয়েছিল। একইসঙ্গে ইডি-র তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে যে, শুনানির দিন আদালতে নিয়ে আসার সময় পার্থের জন্য পৃথক গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু অন্য বন্দিদের নিয়ে আসা হয় প্রিজন ভ্যানে চাপিয়ে। পার্থের জন্য পৃথক ব্যবস্থা কেন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয় ইডি-র তরফ থেকে। ইডি। ইডির যুক্তি, পার্থ প্রভাবশালী হওয়ার কারণেই তিনি এই বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন।
তবে এদিন ইডি-র তরফ থেকে বারবার এটাই বলা হয় যে, পার্থ রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে একা হাতে ‘ধ্বংস’ করে দিয়েছেন। এই কাজে তাঁকে আরও কয়েক জন সাহায্য করেছেন। ইডির অভিযোগ, রাজ্যের অনেক জায়গাতেই বেসরকারি স্কুল নেই। সরকারি স্কুলের উপরই নির্ভর করে থাকতে হয় পড়ুয়াদের। তাই সেই সব স্কুলে অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগের অর্থ স্কুলের পড়াশোনার মান নষ্ট করা। এই ভাবে পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নষ্ট করার চেষ্টা হয়েছে।