আদানি ইস্যুতে উত্তাল সংসদের দুই কক্ষ, মোদিকে বিদ্ধ করে টুইট জয়রাম রমেশের

আদানি ইস্যুতে উত্তাল সংসদের দুই কক্ষ। যৌথ সংদীয় কমিটিকে দিয়ে তদন্তের দাবি বিরোধীদের। বাইরের বিষয় নিয়ে সভার কাজ পণ্ডের চেষ্টায় বিরোধীরা, দাবি স্পিকারের। দুই সভার অধিবেশন দুপুর ২টো পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করা হয়। জনগণের প্রকৃত সমস্যার কথা তুলে না ধরে সভার কাজ পণ্ড করার জন্য বিরোধীদের সমালোচনা করা হয়েছে। আদানি ইস্যুতে বিরোধীরা যে সরকারকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ, তা ফের একবার স্পষ্ট হল। সোমবার লোকসভা অধিবেশন শুরুর সঙ্গে যৌথ সংসদীয় কমিটিকে দিয়ে তদন্তের দাবিতে সোচ্চার হয় বিরোধী শিবির। সরকার প্রধানমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ গৌতম আদানির  সংস্থাকে আড়াল করার চেষ্টা করছে বলে দাবি ওঠে। বিরোধীদের একাংশ তদন্তের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। কেউ কেউ নিজেদের আসনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এই সময় সভার কাজ সুষ্ঠভাবে করার জন্য স্পিকার ওম বিড়লার আবেদন ব্যর্থ হয়। বিক্ষোভকারীদের নিজেদের আসনে বসার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলেও, মানেনি বিরোধী শিবির। এদিকে আদানি ইস্যুতে এখনও প্রধানমন্ত্রী মুখ না খোলায়, তিনটি প্রশ্নের প্রশ্নমালা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। এই সিরিজের নাম দেওয়া হয়েছে ‘হাম আদানিকে হ্যায় কৌন’। কারণ, প্রধানমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানির গোষ্ঠীর শেয়ার ধসের ঘটনায় দুশ্চিন্তায় দেশের জনতা। এই ঘটনায় বিশ্বের দশ বিত্তশালীদের তালিকা থেকে ছিটকেও গিয়েছেন আদানি। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধিও। এদিকে সোমবার প্রধামন্ত্রীর নীরবতাকে কটাক্ষ করে রবিবার এক টুইট করেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। টুইটে তিনি লেখেন, আদানি কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পরেও মোদির নীরবতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। কংগ্রেস বাধ্য হয়েছে প্রশ্ন সংক্রান্ত একটি সিরিজ চালু করতে। রমেশ বলেন, সেই সিরিজে প্রতিদিন তিনটি করে প্রশ্ন রাখা হবে প্রধামন্ত্রীর উদ্দেশে। টুইটে সিরিজে প্রথম তিনটি প্রশ্নেরও উল্লেখও করেন কংগ্রেস নেতা। সেই সঙ্গে আদানি ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী যাতে নীরবতা ভাঙেন, সেই আবেদনও করেন জয়রাম রমেশ।

এদিকে আদানি ইস্যুতে বিরোধীদের এই আচরণের তীব্র নিন্দা করেন স্পিকার ওম বিড়লা।আলোচনায় নথিভুক্ত নয়, এমন ইস্যু তুলে বিরোধীরা সভার কাজ ভণ্ডুলের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। দেশের প্রকৃত সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য বিরোধীদের প্রতি আবেদন জানান । কিন্তু তাতেও কোনো কাজ না হওয়ায় দুপুর ২টো পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবি ঘোষণা করেন স্পিকার। শুধু লোকসভা নয়, যৌথ সংসদীয় কমিটিকে দিয়ে বিরোধীদের তদন্তের দাবিতে অচল হয়ে পড়ে রাজ্যসভাও। বিরোধীদের তোলা ইস্যুকে যুক্তিহীন বলে দাবি করেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তথা উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়। জনগণের উপকার হয়, এমন ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য বিরোধীদের কাছে আবেদন করেন। এদিকে এই পরিস্থিতিতে রবিবার তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন টুইট করেন, ‘বিজেপি ভয় পেয়েছে, তাই তারা সংসদে আলোচনায় অংশ না নিয়ে পালাতে চাইছে৷ নরেন্দ্র মোদি সরকারকে চেপে ধরার সুবর্ণ সুযোগ সামনে, যেখানে সোমবার সংসদের উভয় কক্ষে রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের উপরে আলোচনা হবে৷ কড়া নজর রাখা হবে। যদি কোনও দল বিশৃঙ্খলা করে, তা হলে তারা প্রকৃতপক্ষে বিজেপির অংশীদারের ভূমিকায় থাকবে৷ আমরা সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস আলোচনা চাই, বিশৃঙ্খলা নয়৷’

প্রসঙ্গত, গত ২৮ জানুয়ারি মোদি ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থার বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসে। আমেরিকার লগ্নি সংক্রান্ত গবেষণাকারী সংস্থা ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’-এর রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে কারচুপি করে নিজেদের সংস্থার শেয়ারের দর বাড়িয়েছে গৌতম আদানি গোষ্ঠী। আদানি ইস্যু প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ বিরোধীরা। বাজেট পেশের পরের দিন থেকেই সুর চড়িয়েছে তারা। পরিস্থিতি যা, তাতে বাজেট অধিবেশনের আগামী দিনগুলিতে সভার কাজ আদৌও সুষ্ঠুভাবে শেষ হবে কিনা, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four + eight =