রাজীব মুখোপাধ্যায়
হাওড়া: মেরেকেটে হাতে মাত্র ৬ দিন। ৮ জুলাই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট। এখন তাই নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই হাওড়ার জগাছা উনসানি এলাকার পতাকার কারিগরদের। ঘাসফুল থেকে পদ্মের প্রতীক, চাহিদামতো বামফ্রন্ট থেকে নির্দল প্রার্থীদের পতাকা বানাতে হচ্ছে চরম ব্যস্ততায়। জগাছা থানা এলাকার উনসানিতে বহু মানুষ পতাকা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতিবারই ভোটের আগে নজরে আসে পতাকা তৈরির এই ব্যস্ততা। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি তার। এই সময়ে সব দলের প্রচারের জন্য পতাকার বাজার একেবারে তুঙ্গে। তাই সময়মতো বরাতের পতাকা সরবরাহ করার জন্য নাওয়া খাওয়া ভুলতে বসেছে হাওড়ার উনসানি এলাকার পতাকা তৈরির কারিগরেরা।
বরাত পাওয়া দলীয় পতাকা সময়ে দিতে হবে। তাই এই মুহূর্তে নাওয়া-খাওয়ারও সময় নেই। অগত্যা রাত জেগে চলছে পতাকা তৈরির কাজ। নির্বাচনের মুখে অনেকটা বাড়তি লাভের মুখ দেখতে পেয়ে খুশি উনসানির পতাকা তৈরির কারখানার মালিক রাজু হালদার এবং কারিগররা। হাওড়ার ডোমজুড় ব্লকের উনসানি এলাকায় কয়েক দশক ধরে সব রাজনৈতিক দলের পতাকা তৈরি করে আসছেন রাজু হালদার। ভোটের মুখে সব রাজনৈতিক দলের পতাকা তৈরির পাশাপাশি স্বাধীনতা দিবস এবং প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে কাজের চাপ অনেকটাই বেড়ে যায়।
আচমকাই পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ার ফলে কার্যত কাজের চাপ বহুগুণ বেড়ে গেছে পতাকা তৈরির কারিগরদের। এখন তারা দিনরাত এক করে শাসক দল তৃণমূল , কংগ্রেস, গেরুয়া শিবির বিজেপি , বামফ্রন্ট এবং আইএসএফের পতাকা তৈরি করে চলেছেন। পাশাপাশি এই তালিকাতে বাদ যায়নি নির্দল প্রার্থীদের পতাকাও। রাজু হালদারের কারখানাতে তৈরি ছোট বড় বিভিন্ন মাপের পতাকা যাচ্ছে উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলাতে। এই বছর পতাকা ছাড়াও কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতীক সহ গেঞ্জির চাহিদাও বেশ ভালো আছে। আর তাই গেঞ্জিতে দলীয় প্রতীক ছাপানোরও কাজও পুরোদমেই চলছে।
কাজের চাপের প্রসঙ্গে কারখানার মালিক রাজু হালদার বলেছেন, ‘আমার কারখানায় ১০ জন কারিগর কাজ করছে। তাতেও কাজ শেষ হচ্ছে না। মাঝরাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে আশেপাশের কিছু বাড়িতে সেলাইয়ের জন্য মাল পাঠানো হচ্ছে। যেহেতু এখান থেকে গোটা রাজ্যেই পতাকা সরবরাহ করা হচ্ছে তাই কাজের চাপ একটু বেশি।’
তবে কাজের চাপ বেশি হলেও ভোটের জন্য ভালো লাভ হওয়ায় খুশি কারখানার মালিক এবং কর্মীরা। গণতন্ত্রের উৎসবকে আরও রঙিন করতে পারার কারিগর হয়ে ও বাড়তি লাভ হিসাবে অতিরিক্ত আয়ের দরুন তাঁরাও এই কাজে উৎসাহ পাচ্ছেন। করোনা ও লকডাউন পরিস্থিতির মন্দা কাটিয়ে ভোটের মুখে বাড়তি লাভ হওয়ায় খুশি তাঁরা। কারখানার এক কর্মচারী বলেন, ‘এখন কাজের এত চাপ যে আমরা খাওয়া দাওয়ার সময় পর্যন্তù পাচ্ছি না।’
রোজই সকাল ১০টার টিফিন দুপুর বারোটায় খাচ্ছি। আচমকাই ভোট ঘোষণা হয়ে যাওয়ার ফলে আমাদের কাজের চাপ আরও বেড়ে গিয়েছে। এখন সব রাজনৈতিক দলই চাইছে তাদের যেন তাড়াতাড়ি পতাকা দিয়ে দেওয়া হয়। *অন্য এক কর্মচারী জানান, ‘এত কাজের চাপে আমাদের বাড়ি যাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে। কারখানার মালিক জানিয়েছেন ভোটের পর ছুটি দেবে, তার আগে ছুটি পাবো না।’
যদিও মালিক, শ্রমিক উভয়পক্ষের দাবি রাজনৈতিক দলের বিধায়ক, জেলা সভাপতি এবং দলীয় নেতাদের দেওয়া অর্ডার অনুযায়ী তাঁরা পতাকা তৈরি করেন। ভোটের হাওয়া কোনওদিকে সেই বিষয়ে তাঁদের কোনও মাথাব্যথা নেই। যদিও তবে তাঁরা জানান তৃণমূল আর বিজেপির পতাকার বরাত এবারে সব থেকে বেশি। তবু রাজ্যের মসনদ দখলে পদ্ম ও ঘাস ফুলের লড়াইয়ের কারণে পতাকা কারিগরদের ব্যবসাতে পদ্মেই বিরাজমান মা লক্ষ্মী, যা তাঁদের সবচেয়ে বড় পাওনা।