৭৫-এও উমার হাতে পঞ্চায়েতের পদ্ম

কাঁকসা: এ রাজ্যে যখন ‘পদ্মফুল’ সেভাবে ফোটেনি, তখনই স্বামীর সঙ্গে গেরুয়া ব্রিগেডে নাম লিখিয়েছিলেন তিনি৷ ২৫ বছর আগে বাম জমানায় তৎকালীন শাসক দলের চোখরাঙানি অগ্রাহ্য করে বঙ্গে পদ্মফুল ফোটাতে সচেষ্ট হয়েছিলেন স্বামী-স্ত্রী৷ স্বামীর সঙ্গে বিজেপির পতাকা তুলে ধরেছিলেন। এরপর গঙ্গা-যমুনা দিয়ে জল বয়েছে অনেক, কিন্তু ৭৫ বছর বয়সেও তাঁর দৃঢ়তায় এতটুকু চিড় ধরেনি৷ তিনি হলেন ৭৫ বছরের বৃদ্ধা কাঁকসার আমলাজোড়া অঞ্চলের বাসিন্দা উমারানি মিত্র। এবছর ফের তিনি গেরুয়া বাহিনীর হয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন৷

২০ বছর আগে শাসক দলের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে কাঁকসার আমলাজোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বিহারপুরে বিজেপির হয়ে পঞ্চায়েত প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। ইতিহাস বদলে ২০১১ সালে বাংলায় শাসন ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০ বছর পরে ফের বিজেপির প্রতীকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ধোবাঘাটা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উমারানি মিত্র। যাকে ঘিরে ইতিমধ্যে শোরগোল পড়ে গিয়েছে কাঁকসা জুড়ে। তিনি জানান, জয় হবেই৷ কারণ মানুষ তাঁকে ভালোবাসে। তৃণমূল ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের অত্যাচার, দুর্নীতি থেকে গ্রামকে মুক্ত করার জন্যই এবার নির্বাচনে লড়ছেন তিনি।

তিনি আরও জানান, তাঁর স্বামী কুবের মিত্র সিপিএমের সন্ত্রাস উপেক্ষা করেই বিজেপি করতেন। কয়েকজন যুবককে সঙ্গে নিয়ে তিনি বিজেপির পতাকা তুলে ধরেছিলেন আমলাজোড়া অঞ্চলে। তার জন্য ২৫বছর আগে সিপিএম তাঁদের পরিবারের ওপরে নানাভাবে অত্যাচার চালিয়েছিল। কিন্তু ভয় পাননি তাঁর স্বামী। তবে এখন তাঁর স্বামী প্রয়াত হয়েছেন৷ দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলেও প্রয়াত হয়েছেন। বর্তমানে বার্ধক্য ভাতা পেলেও, বিজেপি করেন বলে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি পাননি বলে তাঁর অভিযোগ। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী উমারানি মিত্র জানান, জয়ী হলে তিনি বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের হয়েই কাজ করবেন যাতে তাঁরা শেষ বয়সে ভালোভাবে বাঁচতে পারে।

বিজেপি নেতা অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “বাংলায় তৃণমূলের ব্যাপক চুরি, বিরোধীদের ওপর অত্যাচার, ব্যাভিচার, সন্ত্রাস দেখে ৭৫ বছরের বৃদ্ধা উমারানি দিদাকে পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়াতে হল আমলাজোড়াতে। হায় হায় বাংলা, সারা পৃথিবী দেখছে৷” উমারানি দেবী যেসব অভিযোগ তুলছেন, তা মিথ্যা বলেই দাবি করেছেন বিদায়ী পঞ্চায়েত প্রধান চয়নিকা পাল। তিনি জানান, ওনার পরিবারের দু’টি জব কার্ড আছে৷ ওনার নাম যুক্ত রয়েছে ওনার এক পুত্রবধূ লক্ষ্মী মিত্রর জবকার্ডের সঙ্গে। ওঁদের দু’জনের বাড়ি রয়েছে আবাস যোজনায় কিন্তু ওনার পৃথক জবকার্ড নেই।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী পালটা কটাক্ষ করে জানান, বিজেপিকে এক বৃদ্ধাকে নামাতে হচ্ছে প্রার্থী করে আর এটাই প্রমাণ করছে বর্তমান প্রজন্ম বিজেপিকে ত্যাগ করেছে৷ প্রার্থী নেই তাই ৭৫ বছরের বৃদ্ধাকে ভোটে নামিয়েছে বিজেপি। তিনি আরও জানান, এটাই প্রমাণ করে তৃণমূলের রাজত্বে গণতন্ত্র আছে, যা সিপিএম জমানায় ছিল না। এখন সবার নজর ধোবাঘাটার দিকে৷ ধোবাঘাটে যেন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে বাজছে ‘রঙ দে তু মোহে গেরুয়া…৷’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × two =