ম্যাচের শেষ ওভারে পাক স্পিনার মহম্মদ নওয়াজের চতুর্থতম ডেলিভারিটা গ্যালারিতে পড়তেই এল শাপমুক্তির টাটকা বাতাস। সেই শাপমোচনের ভগীরথ হয়ে দেখা দিলেন হার্দিক পাণ্ডিয়া। এমন দিনে তিনি ছাড়া আর ম্যাচের সেরা কেই বা হতে পারেন। শাপমোচনের কথা তাঁর ক্ষেত্রেও সমান খাটে। তাই হয়তো ম্যাচ শেষে মুখে দরাজ হাসি। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে এমন নাটকীয় জয় আসবে, তা কি বাইশ গজে দাঁড়িয়ে অনুভব করতে পেরেছিলেন তিনি?
হার্দিকের কথায়, “পরিস্থিতি উপলব্ধি করে নিজের হাতিয়ারগুলো ব্যবহারের চেষ্টা করেছি। বোলিংয়ের সময় যেমন লেংথে নজর দিয়েছি। তেমন ব্যাটিংয়ের সময় মাথা ঠান্ডা রেখে নিজের দায়িত্ব পালন করেছি। আমি জানতাম, নওয়াজকে বোলিংয়ে আনবে ওরা। তার অপেক্ষায় ছিলাম। শেষ ওভারে ৭ রান দরকার ছিল। যদি ১৫ রানও দরকার থাকত, তাহলেও সুযোগ কাজে লাগাতাম।”
বল হাতে তিনটি মূল্যবান উইকেট, আর ব্যাট হাতে ১৭ বলে ৩৩ নটআউট। ব্যাট-বলে অলরাউন্ড অবতারে মরুশহরে যেন পুনর্জন্ম ঘটল হার্দিকের। পাকিস্তানের দর্প চূর্ণ করে সেই আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া হার্দিকের চোখেমুখে। ফাইনাল ওভারে ‘ম্যাচ-ফিনিশ’,বিন্দুমাত্র চাপও ভর করেনি তাঁর ওপর। হার্দিকের কথায় উল্টো সুর। বললেন, “আমি জানতাম, ওদের বোলার আমার চেয়েও বেশি চাপে ছিল। আমার শুধু একটা ছয়ের দরকার ছিল, ব্যাস। আমি সেই ব্যাপারটাকে সহজ করে দেখেছি।”
আর হার্দিকের যোগ্য দোসর? পাক-বধের আরেক কাণ্ডারি জাদেজা। শেষ ওভারে শুরুতে ছয় মেরে ফিনিশ করতে চেয়েছিলেন। পারেননি। জাড্ডুর কাজটা করলেন হার্দিক। পরে জাদেজা বলেন, “পাকিস্তানের বোলিং অ্যাটাক যে শক্তিশালী এবং কড়া চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে, তা জানতাম। ওরা কোনও লুজ বল দেয়নি। আমরা লড়াইটা জারি রেখেছিলাম। ম্যাচ ফিনিশ করতে পারিনি ঠিকই, তবে হার্দিক পেরেছে। ওর শক্তি আমি জানি। তাই ব্যাটিংয়ের সময় ওকে স্ট্রাইক দিতে চাইছিলাম।”
আর রোহিত? তাঁর নেতৃত্বেই তো এল বহুকাঙ্ক্ষিত শাপমুক্তি। এবং সেই মরু শহরেই। ভারত অধিনায়কের কথায়, “রান তাড়া করে জেতা সহজ ছিল না। কিন্তু বিশ্বাস ছিল, আমরাই পারব। যখন সেই দৃঢ় বিশ্বাস থাকে, তখন কোনকিছুই আর বাধা থাকে না।” দলের পারফরম্যান্সে খুশি হিটম্যান। আর হার্দিক? মুগ্ধ রোহিত বলেন, “কামব্যাকের পর থেকে হার্দিক এককথায় ব্রিলিয়ান্ট। যখন ও দলে ছিল না, তখন নিজের ফিটনেস নিয়ে খেটেছে। এখন চাইলেই ও ১৪০ ঘণ্টায় কিমির বেশি গতিতে বল করতে পারে। ওর ব্যাটিং কোয়ালিটি নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে আগের চেয়ে ও অনেক পরিণত, শান্ত। এমন প্রবল চাপের পরিস্থিতিতে অনেকে ঘাবড়ে যায়, প্যানিক করে। হার্দিকের মধ্যে তার কোনও লক্ষণ ছিল না।”