হেরিটেজ এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হল চত্বর থেকে বেআইনি নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ

হেরিটেজ ভবন এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হল-এর চত্বর থেকে সমস্ত বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট । এ জন্য জেলাশাসককে একটি বিশেষ দল গঠনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মহারানি ভিক্টোরিয়ার প্রথম পুত্র অ্যালবার্ড এডওয়ার্ডের স্মরণে বাঁকুড়ার হেরিটেজ ভবন এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল তৈরি হয়েছিল।
মামলাকারী সংগঠনের তরফে রঘুনাথ চক্রবর্তী ও শবনম সুলতানার অভিযোগ, এই হেরিটেজ ভবনের একাংশ দখল করে বর্তমানে স্টাফ কোয়ার্টার ও একাধিক পাকা স্টল নির্মান করেছে বাঁকুড়া পুরসভা। অন্য দিকে, ভবনের আরেকটি অংশ দখল করেছে বাম সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন স্টেট কোঅর্ডিনেশন কমিটি। এমনই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলায় আগেই জেলা ডেপুটি ভূমি ও ভূমি সংস্কার অধিকারিকের কাছে রিপোর্ট তলব করেছিল হাইকোর্ট।
এবার এই মামলার শুনানিতে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যর ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, হেরিটেজ ভবনের এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে থাকা সমস্ত বেআইনি নির্মাণ সরিয়ে ফেলতে হবে। আর এর জন্য জেলাশাসককে একটি বিশেষ দল গঠনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। উচ্চ আদালত জানিয়েছে, জেলা শাসকের গঠিত দল দু’সপ্তাহের মধ্যে এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হলের ওই ভবনের সীমানা চিহ্নিত করবেন এবং সেখানে থাকা বেআইনি নির্মাণ ভাঙার প্রক্রিয়ায় শুরু করবে। ১১ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানিতে আদালতের এই নির্দেশের পর তা কার্যকর করার গতিপ্রকৃতি নিয়েও রিপোর্ট দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মামলার পরবর্তী শুনানি। সেদিন পুরসভা আধিকারিকদেরও উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।
প্রসঙ্গত, রানি ভিক্টোরিয়ার প্রথম পুত্র অ্যালবার্ড এডওয়ার্ডের স্মরণে বাঁকুড়া সদরে তৈরি হয়েছিল এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হলটি। তিনি ১৯০১ থেকে ১৯১০ পর্যন্ত ব্রিটিশের শাসক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর বাংলার তৎকালীন লেফটেন্যান্ট গভর্নর লর্ড রোনাল্ড শে কলকাতার একটি কমিটি গঠন করেন। এই কমিটির উদ্যোগে বাঁকুড়া জেলায় তৈরি করা হয় এই হল। হেরিটেজ কমিটি আগেই এই হলটিকে হেরিটেজ ভবন হিসাবে চিহ্নিত করে। এটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ইন্দো-ইউরোপিয়ান স্থাপত্য শৈলীতে। বর্তমানে এই হলটির প্রবেশদ্বারের শীর্ষে একটি অশোক স্তম্ভ রয়েছে।১৯১৮ সালে দুর্ভিক্ষের সময় এই হলটি ত্রাণকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। এই হলটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, রামকিঙ্কর বেইজ এসেছিলেন। ২০১১ সালের ২ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই হলটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সম্প্রতি এই হেরিটেজ ভবনটি থেকে বেআইনি দখলদার মুক্ত করতে আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়ে মামলা করেছিল বাঁকুড়া শাস্ত্রীয় সঙ্গীত সমাজ নামে একটি সংগঠন।
সেই রিপোর্টে বেআইনি দখলদারির কথা উল্লেখ করা হয়। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে বেআইনি দখলদার সরাতে এই নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × four =