বুধবার খোঁচা দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৃহস্পতিবার একই প্রসঙ্গ তুলে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীকে কটাক্ষ করলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এদিন লোকসভায় শেষ হল মোদির জবাবি ভাষণ। বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ হয়ে গেল ভোটাভুটিতে। স্পিকার ওম বিড়লা জানিয়ে দিলেন, সংখ্যা গরিষ্ঠতায় অনাস্থার বিপক্ষেই ভোট গিয়েছে বেশি।
লোকসভায় অনাস্থা বিতর্কের জবাবি ভাষণ দিতে উঠে মোদি শুরুই করেন অধীরকে দিয়ে। পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে ‘অধীরবাবু’ সম্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘এই অনাস্থা-বিতর্কে এমন সব অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে, যা আগে কখনও দেখিনি, শুনিনি এমনকি, কল্পনাও করিনি! বৃহত্তম বিরোধী দলের নেতার নাম প্রথমে বক্তাদের তালিকাতেও ছিল না!’ তার পরেই কংগ্রেস সাংসদদের লক্ষ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের দুর্বলতা কোথায়? কেন অধীরবাবুকে কোণঠাসা করছেন? জানি না, কলকাতা থেকে কোনও ফোন এসেছে কি না!’ অর্থাৎ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যাঁর সঙ্গে অধীরের দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের এবং সুবিদিত, তিনি কংগ্রেস নেতৃত্বকে অধীরকে বক্তা তালিকায় না-রাখার কথা বলেছেন কি না।
মোদি যা বলেছেন, তা অধীরের ‘বিড়ম্বনা’ বাড়ানোর পক্ষে যথেষ্ট। কখনও নাম না-করে মমতার প্রসঙ্গ তুলেছেন আবার কখনও ১৯৯১ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের কথা মনে করিয়ে দিয়ে অধীরের উদ্দেশে বলেছেন, ‘মনে করে দেখুন, এই বামপন্থীরা আপনাকে সেই ভোটে হারিয়ে দিয়েছিল। এখন তাঁদের সঙ্গে আপনাকে জোট করতে হচ্ছে! অতীতের কথা এত সহজে ভুলে গেলেন?’
অন্যদিকে, বুধবারই রাহুল গান্ধি তাঁকে ‘ভারতমাতার খুনি’ বলে তোপ দেগেছিলেন। প্রত্যাশামতোই বৃহস্পতিবার মোদি বিরোধীদের বিরুদ্ধে তীব্র সুরে আক্রমণের পথে গেলেন। একদিকে তাঁর সরকারের সাফল্যের খতিয়ান, অন্যদিকে ২০২৪ সালে আগের রেকর্ডও ভেঙে দিয়ে নতুন সরকার গড়ার দাবি। পাশাপাশি বিরোধীদের ‘অপশধে’র বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন তিনি। করলেন ব্যাঙ্গও। স্বমেজাজে ধরা দিলেন এনডিএ সাংসদদের তোলা ‘মোদি মোদি’ ধ্বনির মধ্যে।
এদিন মোদি বলেন, বিরোধীরা এমনকী এমনও স্লোগান দিয়েছেন ‘মোদি তেরি কবরা খুদেগি।’ অর্থাৎ মোদি, আপনার কবর খোঁড়া হবে। এই ধরনের ‘অপশধ’ প্রয়োগের তীব্র নিন্দা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে যে ধরনের ‘অসংসদীয়, অপশধ’ ব্যবহার করা হয়েছে তাকে তিনি ‘টনিক’ হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
পাশাপাশি তিনি বলেন, বিরোধীদের আচরণ ‘উটপাখির মতো’। তাঁর মতে, বিরোধীরা যখনই কোনও কিছুর নিন্দা করেন, তখন তা আরও ভালভাবে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। মোদিকে বলতে শোনা যায়, ‘বিরোধীরা একধরনের ‘গোপন আশীর্বাদ করেন। তাঁরা কারও খারাপ কামনা করলে তাঁদের সঙ্গে ভালই হয়।’ আর এরপরই তিনি বলেন, ‘আমিই এর প্রমাণ যে বিরোধীরা যাঁকে গালাগালি করে, তাঁর উন্নতি হয়। ২০ বছর হয়ে গেল। কী না হল। কিন্তু উন্নতিই হয়েছে।’
আগেও একাধিকবার ইন্ডিয়া জোটকে নানাভাবে কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে একাসনে বসিয়েছেন এই জোটকে। অনাস্থা প্রস্তাবের জবাবি ভাষণেও সেই একই কৌশল নিলেন মোদি। জোটের নাম নিয়ে আক্রমণের পর বিরোধীদের দুর্নীতি নিয়েও সরব হন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অহংকারীদের এই জোটে সকলেই প্রধানমন্ত্রী হতে চান। এই জোট আসলে মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতি, তোষণের গ্যারান্টি দেবে। কিন্তু মোদির গ্যারান্টি হল, ক্ষমতায় ফিরে দেশকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে গড়ে তুলব।’