খোলা দুর্নীতি চলছে কলকাতা হাইকোর্টে। যা আইনের চোখে জুডিশিয়াল ফ্রড, এমনটাই পর্যবেক্ষণ বিচারপতি দেবাংশু বসাকের।
সরকারি প্যানেল থেকে বাদ পড়েছেন বহুদিন। এরপরও বিভিন্ন দফতরের মামলায় সরকারের হয়ে সওয়াল করছেন এমন আইনজীবীদের একটা চক্র এবার আদালতের নজরে। ঘটনার সূত্রপাত এক আইনজীবীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা সংক্রান্ত শুনানিকে কেন্দ্র করে। এই শুনানি চলাকালীন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চের নজরে আসে এই ঘটনা। এরপরই তলব করা হয় উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক, লিগ্যাল রিমেমব্রান্স সহ একাধিক অফিসারকে। এই প্রসঙ্গে বিচারপতি বসাকের মন্তব্য, ‘এটা খোলা দুর্নীতি। তার মানে জুডিসিয়াল অফিসার ফ্রড।’ একইসঙ্গে বিচারপতির তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘এরকম সবার কাস্টোডিয়াল জেরা হওয়া উচিত। এটা আদালতের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।’
আদালত এই নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেও রাজ্যের পদক্ষেপের আশ্বাস ও বরিষ্ঠ আইনজীবীদের অনুরোধে বিচারপতি নিজে কোনও পদক্ষেপ করেননি। সরকারি অফিসারদের কাছে বিচারপতি জানতে চান, ‘কী করে ১১ সেপ্টেম্বর একজন আইনজীবী মামলা দায়ের করেন, যিনি প্যানেলেই নেই? তাঁকে কি মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল?’ এরই পাশাপাশি অভিযুক্ত আইনজীবীকে বিচারপতি জানান, ‘আপনার এই কাজের জন্য ২ জন বিচার বিভাগীয় অফিসারের চাকরির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। হাইকোর্ট, জিপি সবাইকে আপনি বেআইনি কাজের সঙ্গে জড়িয়ে দিয়েছেন। প্রশাসনিক বিভাগ জড়িত হয়ে গিয়েছে।’ একইসঙ্গে বিচারপতি অভিযুক্ত আইনজীবীর কাছে এও জানতে চান, ‘কোন অফিসার আপনাকে বলেছে সই করতে? আপনার জন্য জিপি-কে যুক্তি খুঁজতে হচ্ছে।’ এরই রেশ ধরে অভিযুক্ত আইনজীবীর কাছে বিচারপতি জানতে চান কে বলেছিলেন তাঁকে সই করতে সে ব্যাপারেও। কারণ এটা ফৌজদারি মামলার মধ্যে ঢুকে গিয়েছে। একইসঙ্গে বিচারপতি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘রাজ্য এই ভাবে মামলা পরিচালনা করছে!’
এই প্রসঙ্গে রাজ্যের তরফ থেকে জানানো হয়, এইভাবে যাতে মামলা দায়ের করা না হয়, তার জন্য এলআর বিজ্ঞপ্তি তৈরি করেছে সব আইনজীবীদের মধ্যে প্রচার করার জন্য। এই প্রসঙ্গে বিচারপতি জানান, ‘এটা নতুন নয়, এর আগে এমন বেশ কিছু মামলার নিষ্পত্তি করেছি। যেখানে এমন যোগ রয়েছে বলে এখন বোঝা যাচ্ছে।’ এরই পাশাপাশি বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, অন্তত ৩১ টি মামলা এখানেই রয়েছে। তার বাইরে সিঙ্গল বেঞ্চে এমন অনেক মামলা রয়েছে। এরপরইএই ধরনের সব মামলা প্রত্যাহার করে নতুন করে দায়ের করার নির্দেশ দেন বিচারপতি।