প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা অর্থাৎ টেট-এর উত্তরপত্রে কারচুপি চলত কনফিডেনশিয়াল সেকশনে। আর সেই বিভাগে একমাত্র যাতায়াত ছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের। বৃহস্পতিবার হাই কোর্টে সাক্ষ্য দিতে এসে এমনটাই জানালেন পর্ষদের প্রাক্তন সচিব রত্না ভট্টাচার্য। পাশাপাশি পর্ষদের প্রাক্তন সচিব এও জানান, ওই ‘গোপনীয়’ বিভাগের অঙ্গ ছিল উত্তরপত্র অর্থাৎ ওএমআর শিট প্রস্তুতকারী সংস্থা। যা শুনে ক্ষুব্ধ হতে দেখা যায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। এরই রেশ ধরে প্রশ্ন করেন, ‘এখনও এ ব্যাপারে কেন কিছু জানতে পারছে না সিবিআই তা নিয়ে। এরপরই রত্নাদেবীর কথা টেনে কটাক্ষ করে জানান, ‘ সেই সংস্থার সঙ্গে মানিকের ‘কিসের এত প্রেম’?’ এদিন এ ব্যাপারেও সিবিআইকে তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। পাশাপাশি মানিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে এ ব্যাপারে ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সিবিআইকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশও দেন তিনি।
প্রসঙ্গত বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের শুনানিতে হাজির ছিলেন প্রাক্তন পর্ষদ সচিব রত্না। মানিক যখন পর্ষদের সভাপতি ছিলেন, তখন তিনিই ছিলেন পর্ষদের সচিব। এদিন তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় হাই কোর্টে। সাক্ষ্য গ্রহণের সময় আদালতে তাঁর উদ্দেশে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, কেন ২০১৪ সালের টেটের ভিত্তিতে ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত প্যানেল প্রকাশিত হয়নি তা নিয়ে। পাশাপাশি এও জানতে চাওয়া হয়, ২০১৪ সালে নিয়োগের পর শূন্যপদ থাকলেও কেন প্যানেল তৈরি করা হয়নি সে ব্যাপারেও। এর উত্তরে রত্না ভট্টাচার্য জানান, ‘পর্ষদের কনফিডেনশিয়াল সেকশন অর্থাৎ গোপনীয় বিভাগ থেকে আমরা ৮টি প্যানেল পেয়েছিলাম। কিন্তু ওগুলির কোনওটাই অতিরিক্ত প্যানেল নয়। তৎকালীন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য এ বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই ‘কনফিডেনশিয়াল সেকশনের সঙ্গে একমাত্র তাঁর যোগাযোগ ছিল। এস বসু রায়চৌধুরী কোম্পানির প্রতিনিধি এবং প্রয়াত গৌতম মুখোপাধ্যায় ছিলেন ওই বিভাগের সদস্য।’ এই প্রসঙ্গে রত্নাদেবী এও জানান, উত্তরপত্র তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছিল এস বসু রায়চৌধুরী কোম্পানিকে। ওই কোম্পানির সঙ্গে মানিকের যোগাযোগ ছিল বলে অভিযোগ।
এরপরই হাই কোর্ট এর পরেই রত্নার কাছে জানতে চায়, ওই কোম্পানি কবে থেকে পর্ষদের সঙ্গে যুক্ত। সে ব্যাপারেও। জবাবে রত্নাদেবী জানান, ‘২০১২ সালের পর থেকে।’ তিনি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সঙ্গে যুক্ত হন ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে। রত্না যোগ দেওয়ার পরেই ওই সংস্থার সঙ্গে লেনদেন শুরু হয় পর্ষদের। এ প্রসঙ্গে হাই কোর্টের প্রশ্ন, ‘ওই কোম্পানিকে নিয়োগের জন্য কোনও বোর্ড মিটিং হয়েছিল কিনা তা নিয়েও। জবাবে প্রাক্তন পর্ষদ সচিব জানান, তাঁর এখন মনে নেই। এ-ও বলেন, সেই সময় ওই সংস্থার সঙ্গে একমাত্র সভাপতি যোগাযোগ রাখতেন। আর কেউ রাখতেন না। পর্ষদ বা ডেপুটি সেক্রেটারি কেউই নয়। অন্তত যতটা তিনি জানেন। এরই রেশ ধরে আদালতের তরফ থেকে এ প্রশ্নও করা হয়, ওই সংস্থাকে কেন পর্ষদের কনফিডেনশিয়াল বিভাগের অঙ্গ বলা হত তা নিয়েও। উত্তরে রত্নাদেবী জানান, এর জবাব তিনি জানেন না। সাক্ষ্যগ্রহণের শেষে তাঁকে বিচারপতি বলেন, ‘আপনাকে অনেক কিছু বলতে হবে।’প্রত্যুত্তরে রত্না চক্রবর্তী জানান, তিনি যা জানেন তা বলতে কোনও অসুবিধা নেই।
এদিন ২০১৭ সালের টেটের উত্তরপত্র নষ্ট করা নিয়েও প্রশ্ন করা হয় প্রাক্তন পর্ষদ সচিবকে। উত্তরে তিনি জানান, ‘আমি জানতাম। আমাকে এই মর্মে চিঠি লিখে দিতে বলা হয়েছিল।’ তবে ‘ওএমআর শিট’ নষ্ট করা হয়েছে কি না, বা তাঁর প্রতিলিপি রয়েছে কি না, তা তিনি জানেন না। পাশপাশি এও জানান, তিনি জানান, তিনি শুনেছেন বরাতপ্রাপ্ত সংস্থার এক আধিকারিক আদালতে বলেছেন, নষ্ট করা হয়েছে। এরপরই বিচারপতি জানতে চান, ‘একটা ওএমআর শিটে রোল নম্বর লেখা রয়েছে, কিন্তু নির্দিষ্ট গোলাকার বৃত্ত পূরণ করা হয়নি। কম্পিউটার কি এটা পড়তে পারবে?’ জবাবে প্রাক্তন পর্ষদ সচিব জানান, ‘আমার ধারণা নেই। তবে মনে হয় কম্পিউটার শুধুমাত্র গোল বৃত্তগুলিই বুঝতে পারে।’