২ দিনের বঙ্গ সফরে লোকসভা ভোটের জোরদার প্রচার সেরে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুক্রবার আরামবাগের পর আজ কৃষ্ণনগরে ‘ইসবার ৪০০ পার’-এর মন্ত্র বাংলার জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে গেলেন তিনি।এমনকী বাংলায় ৪২ আসনেই জেতার প্রতিশ্রুতিও চাইলেন।
শনিবার কলকাতা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ হেলিকপ্টারে কৃষ্ণনগরের উদ্দেশে রওনা দেন। সেখানে পৌঁছে সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত একটি সরকারি কর্মসূচিতে যোগ দেন। একগুচ্ছ প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করেন তিনি। সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধনের পরে হুড খোলা গাড়িতে কৃষ্ণনগর কলেজ মাঠে বিজেপির সভায় যোগ দিতে যান। সভায় এসেই ‘হরেকৃষ্ণ’ বলে বক্তৃতা শুরু করেন তিনি। মোদি বলেন, ‘সকলের আশীর্বাদ পেয়ে আমি ধন্য।’
এরপরই তৃণমূলকে লাগাতার আক্রমণ শানান মোদি। বলেন, তৃণমূলের শাসনকালে কাঁদছে মা-মাটি মানুষ। সন্দেশখালি প্রসঙ্গ তুলে বললেন, মহিলারা দুর্গা রূপে রুখে দাঁড়িয়েছিলন। বিজেপির চাপে অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করে মোদি বলেন, ‘এখানে যে ভাবে তৃণমূল সরকার চলছে, তাতে মানুষ নিরাশ হয়ে গিয়েছে। বার বার তৃণমূল সরকারকে ফিরিয়ে এনেছে মানুষ। কিন্তু অত্যাচার এবং দুর্নীতির অপর নাম হয়ে গিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূল বাংলার মানুষকে গরিব করে রেখে দিতে চায়।’
কল্যাণী এমস তৈরির কৃতিত্বও নিলেন মোদি। বাংলার জন্য ‘গ্যারান্টিপূরণ’ হয়েছে বলে দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, কল্যাণী এমস উদ্বোধন যাতে না হয়, তার চেষ্টা করেছে তৃণমূল। তৃণমূলের তোলাবাজ এবং মাফিয়ারা টাকা খাওয়ার চেষ্টা করেছে বলেও অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর। বিজেপির শাসনকালে রাজ্যে অনেক মেডিক্যাল কলেজ খুলেছে বলেও মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী।
আরামবাগের পর কৃষ্ণনগরের জনসভাতেও মোদির মুখে উঠে এল সন্দেশখালির প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ‘তৃণমূল মা, মাটি, মানুষের কথা বলে মা-বোনেদের ভোট পেয়েছে। কিন্তু এখন মা, মাটি, মানুষ তৃণমূলের কুশাসনে কাঁদছে। সন্দেশখালির মানুষ বিচার চেয়ে গিয়েছে। কিন্তু সরকার তাঁদের কথা শোনেনি। রাজ্য সরকার চাইত না যে সন্দেশখালির মূল অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হোক। বিজেপির প্রতিবাদ দেখে ঝুঁকতে বাধ্য হয়েছে রাজ্য সরকার।’
মোদি বলেন, ‘মহিলাদের সুরক্ষার জন্য হেল্পলাইন নম্বর তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু তৃণমূল সরকার তা নিয়ে কিছু ভাবছে না। উজ্জ্বলা গ্যাস নিয়েও মানুষ যে লাভ পেতে পারে, সে কথাও ভাবছে না সরকার। মানুষের জন্য তৈরি প্রকল্পতেও তৃণমূল তোলাবাজদের ঢোকাতে চাইছে।’
১০০ দিনের কাজ নিয়ে তৃণমূলকে তোপ দাগলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘১০০ দিনের কাজে ২৫ লক্ষ ভুয়ো জবকার্ড তৈরি হয়েছে। যারা জন্ম নেইনি, তাদের নামেও জবকার্ড দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের তোলাবাজরা গরিবের টাকা নিয়ে নিয়েছে। তৃণমূল সরকার সব প্রকল্পেই দুর্নীতি করে।’
কৃষ্ণনগরের জনসভা থেকে রেশনকাণ্ড নিয়েও তৃণমূল সরকারকে কটাক্ষ মোদির। তৃণমূলের বিরুদ্ধে রেশন বন্টনে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘মানুষের রেশন নিয়েও দুর্নীতি করেছে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার। বাংলায় ‘স্কিমকে স্ক্যাম’ বানিয়েছে তৃণমূল।’ তাঁর মন্তব্য, ‘তৃণমূলের অর্থ, ‘তুমি, আমি আর দুর্নীতি’।’
সবশেষে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের আগামী ১০০ দিনের জন্য দায়িত্ব বেঁধে দিলেন মোদি। তিনি বলেন, ‘আপনারা আগামী ১০০ দিন গ্রামে গ্রামে যান। গ্রামের সকলকে আমার প্রণাম জানান’।