দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে রেলমন্ত্রীর কাছে মৃতের সংখ্যা জানতে চাইলেন মমতা

বালেশ্বরে পৌঁছে বর্তমান রেলমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়া করমণ্ডলে থাকা যাত্রীদের মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন। সাফ বলেন, ‘আমি তো শুনেছি মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এখনও তিনটি কামরায় তল্লাশি বাকি।‘ মমতার কথা শুনে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব থামাতে গেলে, মমতা বলে উঠলেন, ‘কিছু একটা তো হয়েছে। ভাল করে তদন্ত করতে হবে।’ এদিকে, রেলমন্ত্রীর দাবি, ওড়িশা সরকার বলেছে খাতায়-কলমে মৃতের সংখ্যা ২৩৮। যদিও তা মানতে নারাজ মমতা। ক্যামেরার সামনেই মৃতের সংখ্য়া নিয়ে মমতা-বৈষ্ণবের মধ্যে চলল দড়ি টানাটানি। বর্তমান রেলমন্ত্রীকে বিঁধে প্রাক্তন রেলমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে জানতে চান, বলেন, ‘ওটা তো আগে বললেন। এখন কত?’ এদিকে এই দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা এও জানান, ‘নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে, না হলে এত বড় রেল দুর্ঘটনা হত না। দ্রুত তদন্ত করে দেখা হোক কী কারণ।‘ এরই রেশ ধরে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে পাশে নিয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘করমণ্ডলের অধিকাংশ যাত্রীই পশ্চিমবঙ্গের ছিলেন। এটা একবিংশ শতাব্দীর সবথেকে বড় দুর্ঘটনা। ভাল করে তদন্ত করতে হবে।’
এদিন ঘটনাস্থল থেকেই মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করেন। তিনি জানান, নিহতদের পরিবার পিছু ৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। গুরুতর আহতদের ১ লক্ষ টাকা ও অল্প আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
এরই পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা এদিন এও জানান, ‘আমরাও বাস দিয়েছি। কোনও পরিবারের কোনও সমস্যা থাকলে, স্বজনদের কোনও সমস্যা হলে আমাদের টিম রয়েছে। তাঁরা সাহায্য করতে প্রস্তুত রয়েছেন। তাঁরা ওড়িয়া ভাষাও জানেন। তাঁরা আহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতেও প্রস্তুত রয়েছেন।’
এখানেই শেষ নয়, দুর্ঘটনাস্থল থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পৌঁছে যান বালেশ্বর হাসপাতালে। সেখানে আহতদের খোঁজখবর নেন তিনি। এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, ‘সঠিক সময়ে সব বলব। কিন্তু, আমার সময় যে অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস ছিল, তা এই দুর্ঘটনাস্থলে ছিল না। ফলে এত মারত্মক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এখানে রেলমন্ত্রী উপস্থিত রয়েছেন, তিনি আরও ভালো বুঝবেন বিষয়টা। যাদের প্রাণ চলে গিয়েছে, তা তো আর ফিরে আসবে না, কিন্তু আমার মনে হয় এই অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস থাকলে এমনটা হত না।’
এরই পাশাপাশি রেল নিয়ে গাফিলতির অভিযোগ তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্রকে বিঁধে এও বলেন, ‘আমার মনে হয় রেল মন্ত্রকের উপর সঠিক নজর দেওয়া হয় না। বিশেষ নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে। আমিও দীর্ঘদিন রেলমন্ত্রী ছিলাম। তখন এই মন্ত্রককে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হত। রেল বাজেট আলাদাভাবে হত। এখন তো সেটাও হয় না। মন্ত্রকে কোনও সম্বন্বয় নেই।’
এদিকে অভিশপ্ত করমণ্ডলে এখনও জোরকদমে চলছে উদ্ধার কাজ। শেষ পাওয়া আপডেটে জানা যাচ্ছে এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৬১। তবে তা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে ঘটনার পরই শুক্রবার রাতে বালেশ্বরর উদ্দেশে রওনা দেয় রাজ্যের সরকারের প্রতিনিধি দল। চিকিৎসক, নার্স পাঠিয়েছিলেন মমতা। এদিকে রাত পেরিয়ে সকাল হতেই বালেশ্বরে অকুস্থলে গিয়ে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পৌঁছে গিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। এদিন দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেই রেলমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ফের একবার দুঃখপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। কেন্দ্রের পাশাপাশি বাংলার সরকারও যে সর্বতোভাবে উদ্ধারকাজে সাহায্য করছে সে কথাও বারবার বলেন তিনি। এই প্রসঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী এও জানান, সামান্য আহতরা অনেকেই বাংলায় ফিরে গিয়েছেন। গুরুতর আহতদের জন্য তিনি অ্যাম্বুল্যান্স ও চিকিৎসক দল পাঠিয়েছেন। এছাড়াও বালেশ্বরের হাসপাতালে জায়গা না হলে, আহতদের কলকাতায় এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
এখানে আমাদের মনে রাখতেই হবে দুই দফায় তিনিও সামলেছেন রেল মন্ত্রকের দায়িত্ব। প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। মোদি বিরোধী মুখ হিসাবে গোটা দেশে তিনি এখন পরিচিতি।পাশাপাশি তৃণমূল-বিজেপি আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক নিয়ে প্রায়শই জোর চর্চা চলে রাজনৈতিক মহলে। এদিকে কীভাবে দুর্ঘটনার কবলে পড়ল একযোগে তিনটি ট্রেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। উঠে আসছে নানা তত্ত্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − 2 =