কলকাতা: ১৮৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রাম চালু হয়। তারপর ধীরে ধীরে বিবর্তন ঘটেছে বহু। ব্যস্ত শহর কলকাতার গতির সঙ্গে আর ভিড়ের সঙ্গে অবশ্য পাল্লা দিতে পারেনি সে।
তাই প্রয়োজনের বদলে ঐতিহ্যের যানবাহন হয়ে রয়ে গিয়েছে ট্রাম।শুক্রবার তার ১৫০তম জন্মদিন। সেই উপলক্ষেই আগামী রবিবার শহরে হবে ট্রাম প্যারেড।পুরনো ট্রাম থেকে আধুনিক এক কামরার এসি ট্রাম। দেড়শো বছরের ট্রামের বিবর্তনটাকেই দেখানো হবে শহরবাসীকে। সাত-আটটি ট্রাম ঘুরবে। গড়িয়াহাট থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত এই ট্রাম প্যারেডের আয়োজন করা হয়েছে ‘ট্রাম যাত্রা’ নামে ট্রামপ্রেমী সংগঠনের পক্ষ থেকে। অবশ্যই পরিবহণ দপ্তরের সহায়তায়।
এদিন ধর্মতলায় নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী ছাড়াও শুক্রবার এই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন অঞ্জন দত্ত, মনোজ মিত্ররা। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি থেকে অনেক ট্রামপ্রেমী উপস্থিত ছিলেন এই অনুষ্ঠানে।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে ট্রামযাত্রা নামে বিশেষ অনুষ্ঠান চলছে।সূত্রের খবর, ট্রামের জন্মদিনে পুনর্জন্ম হতে পারে নতুন একটি রুটের। এসপ্ল্যানেড থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত রুটটি ফের চালু হতে পারে। ইতিমধ্যেই নিয়ম করে মাঝরাতে এই রুটের পরীক্ষামূলক দৌড় হয়েছে। তাছাড়াও পর্যটকদের ঘোরাতে এসপ্ল্যানেড থেকে ময়দান হয়ে ভিক্টোরিয়া পর্যন্ত চালু হবে হেরিটেজ রুট।
দেড়শো বছর আগে প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রাম চলেছিল শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত। তবে শহরের গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারায় ট্রামের গুরুত্ব হারিয়েছে। এমনকী ট্রামের অস্তিত্ব নিয়েও দেখা দিয়েছে সংকট।
সম্প্রতি বিধনসভায় অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ট্রামের জন্মদিনের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে জানান, ট্রামের সঙ্গে বহু মানুষের আবেগ জড়িয়ে আছে। কলকাতার ঐতিহ্য এটা। তাই কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে বলেন, ‘শহরে ট্রাম যেন স্বমহিমায় থাকে। উঠে না যায়।’ ফিরহাদও সে বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন।
আগামী একসপ্তাহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে ট্রামপ্রেমী সংগঠনের পক্ষ থেকে। সেইমতো সাজছে ট্রাম। নোনাপুকুর ট্রাম ডিপোয় পড়ে থাকা প্রায় ১০০ বছরের পুরনো ট্রামও রবিবার দেখা যাবে শহরের রাস্তায়। ‘কলকাতা-মেলবোর্ন ট্রামযাত্রার তরফে হবে চলমান ট্রাম উৎসব। সেখানে থাকবেন মেলবোর্নের ট্রামপ্রেমীরাও। থাকবেন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে ট্রামের প্রাক্তন কন্ডাক্টর-চালক রবার্তো দি আন্দ্রেয়া। ‘ট্রামযাত্রার’ আর্টিস্টিক ডিরেক্টর মহাদেব শী বলেন, ‘ট্রামের দেড়শো বছর উপলক্ষে আমরা অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। প্রাচীন থেকে আধুনিক ট্রামের বিবর্তন থাকবে ট্রাম প্যারেড অনুষ্ঠানে।’
অনেকেই আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে আর ট্রাম থাকবে না কলকাতায়। সেই আশঙ্কার মাঝেই কলকাতায় পালিত হচ্ছে ট্রামের ১৫০ বছরের জন্মবার্ষিকী। তবে ট্রাম তুলে দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই সরকারের। ভবিষ্যতে যাতে কলকাতার ট্রাম হেরিটেজ তকমা পায় সেটাও দেখবেন বলে জানান পরিবহণ মন্ত্রী।