বাগনানে রিয়া কুমারী ওরফে ইশা আলিয়া হত্যাকাণ্ডে ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে রহস্য। মৃতার স্বামীর বয়ানে অসংগতি মিলেছে বলে দাবি পুলিশের। ফলে সাতসকালে সত্যিই কি ছিনতাইবাজের কবলে পড়েছিলেন ইশা আর তাঁর স্বামী নাকি নেপথ্যে গভীর ষড়যন্ত্র তা নিয়ে যথেষ্টই সন্দেহে হাওড়া পুলিশ কর্তারা।
এই সন্দেহের পিছনে রয়েছে একাধিক কারণ। প্রথমত, ইশার ঝাড়খণ্ড থেকে এই কলকাতা আসা তার মেয়ের জন্মিদনের উপহার কিনতেই। আর এখানেই পুলিশদের ভাবাচ্ছে, স্রেফ মেয়ের জন্মদিনের উপহার কিনতে কেন কলকাতাকেই বেছে নেওয়া। আরও বড় যে ঘটনাটি সামনে আসছে তা হল, গাড়িতে ইশার রক্তের দাগ মেলেনি। এমনকী ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোলও উদ্ধার হয়নি। কিন্তু গাড়িতে গুলি করা হলে রক্তের দাগ মেলাই স্বাভাবিক।এদিকে ইশার স্বামী প্রকাশ পুলিশের কাছে যে বয়ান দিয়েছিলেন, তাতে বলা হয় যে, ছিনতাইকারীরা ইশাকে গুলি করে। এখন ইশাকে গাড়িতে বা গাড়ির কাছে গুলি করা হলে গাড়িতে তার ক্ত থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু সেই রক্তের চিহ্ন মেলেনি বলেই জানাচ্ছেন তদন্তকারী আধিকারিকেরা। এদিকে আবার এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গাড়ির কাচ বন্ধ ছিল। মৃতার স্বামীর দাবি, বাইরে থেকে ছিনতাইকারীরা গুলি চালায়। তাহলে কীভাবে গাড়ির কাঁচ অক্ষত অবস্থায় থাকল, সেই প্রশ্ন থাকছেই। এছাড়াও যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে বলে দাবি করা হচ্ছে, সেখানেও ধস্তাধস্তির চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলেই জানা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে কীভাবে ওই অভিনেত্রীর মৃত্যু হল, সেই নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। আর এই কারণেই প্রশ্ন উঠছে মৃতার স্বামীর ভূমিকা নিয়ে। দম্পতির মধ্যে সম্পর্ক কেমন ছিল তা নিয়েও তৈরি হয়েছে প্রশ্ন। গোটা ঘটনার নেপথ্যে দাম্পত্য কলহ রয়েছে কি না, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। ফলে স্বামী প্রকাশ ছিনতাইবাজের হামলার দাবি করলেও তা কতটা সত্য তা নিয়ে ধন্দে হাওড়া পুলিশ।
এখানে বলে রাখা শ্রেয়, মৃত রিয়া কুমারী ওরফে ইশা আলিয়ার আসলে ঝাড়খণ্ডের অভিনেত্রী। তাঁর স্বামী প্রকাশ বড় ব্যবসায়ী। শুধু তাই নয়, শর্ট ফিল্মের ডিরেক্টরও তিনি।ইউটিউবার হিসেবেও খ্যাত হয়ে উঠেছিলেন এই রিয়া কুমারী ওরফে ইশা আলিয়া। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকাশের দাবি, সামনেই মেয়ের জন্মদিন। তাই উপহার কিনতে ঝাড়খণ্ড থেকে কলকাতা আসছিলেন।আর সেই সময়েই বুধবার সকালে তাঁর শিশু কন্যার সামনেই পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে দুষ্কৃতীরা। পুলিশের কাছে দেওয়া প্রকাশের বয়ান অনুসারে, বাগানানের মহিষরেখা ব্রিজের কাছে প্রস্রাব করার জন্য গাড়ি থেকে নামেন। তখনই প্রকাশকে ঘিরে ধরে তিনজন সশ্রস্ত্র দুষ্কৃতী। পুলিশকে প্রকাশ কুমার এও জানিয়েছেন, তাঁকে ঘিরে ধরে টাকা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে ওই দুষ্কৃতীরা। তা দেখে তাঁর স্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে দুষ্কৃতীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। ঠিক সেই সময়ই তাঁর স্ত্রী রিয়া কুমারীকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করা হয়। একইসঙ্গে প্রকাশ কুমার এও জানান, গুলি করে টাকা ছিনতাই করে দুষ্কৃতীরা সেখান থেকে চম্পট দিলে তিনি আহত স্ত্রীকে গাড়িতে তুলে কিছু দূর এগিয়ে যান। রাস্তার ওপর থাকা একটি চায়ের দোকানে সাহায্য চাইতেই স্থানীয় তাঁর স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করে। স্থানীয় তরফে রাজাপুর থানার পুলিশকেও খবর দেওয়া হয়। আহত মহিলাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়ে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, মহিলার কানের নীচে গুলি লেগেছিল।