১৩ বছরে ব়্যাগিংয়ের অভিযোগের সংখ্যা ৩১। কিন্তু শাস্তি ঘোষণা হয়েছে মাত্র ৭ জনের বিরুদ্ধে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নাকি কোনও অপরাধ এবং অপরাধী খুঁজেই পায়নি। র্যাগিংয়ের অভিযোগকে ধারাবাহিক ভাবে লঘু করে দেখার পরিণামেই গত অগাস্টে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রের মৃত্যু এবং ভয়াবহ অত্যাচারের ঘটনা বলে মেনে নেওয়া হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির রিপোর্টে।
একইসঙ্গে ওই রিপোর্টে এও জানানো হয়েছে, কমিটি মনে করছে, ছাত্র সংসদ, বিশেষত ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার ‘ফেটসু’ ও তাদের নেতারা, শিক্ষকদের একাংশ এবং কর্তৃপক্ষ, এমনকী ইসি’র সদস্যদের একাংশ ক্রমাগত অভিযুক্তদের আড়াল করার খেসারত এবার গুণতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়কে। প্রতি ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হলে এবং র্যাগিং-বিরোধী পদক্ষেপ করা হলে এক পড়ুয়ার প্রাণ যেতো না বলেই উল্লেখ করা হয়েছে অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির রিপোর্টে।
রিপোর্টে যা বলা হয়েছে তাতে কমিটির বক্তব্য, ৯ অগাস্ট রাতে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনা মোটেই বিচ্ছিন্ন নয়। গত ১৩ বছরের খতিয়ান তুলে ধরে মেন হস্টেল ও ক্যাম্পাসে র্যাগিংয়ের ধারাবাহিকতা চিহ্নিত করে কমিটি। কিন্তু সিংহভাগ ক্ষেত্রে যে ভাবে অপরাধীদের খুঁজে না-পাওয়ার ধারা চলেছে, এমনকী অভিযোগের কাগজপত্রও যে ভাবে ‘হারিয়ে গিয়েছে’ তাতে হতবাক কমিটির অনেক সদস্যই। এই প্রসঙ্গেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১১ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত র্যাগিংয়ের মোট অভিযোগ দায়ের হয়েছিল ১৩টি। তাতে মাত্র তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ কার্যকর করা হয়েছিল। এই পর্বে ২০১৩ সালে দুই পড়ুয়াকে সাসপেন্ড করা হয়। কিন্তু তার পর কম্পিউটার সায়েন্সের এক অধ্যাপক তৎকালীন ভিসি সৌভিক ভট্টাচার্যকে চিঠি দিয়ে শাস্তি কমানোর কথা বলেন। ফেটসু’র তৎকালীন সহসাধারণ সম্পাদকও কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে হুঁশিয়ারি দেন, সাজা প্রত্যাহার করা না হলে ক্লাস বয়কট হবে।
এই ঘটনার জেরে ৫২ ঘণ্টা সৌভিককে ঘেরাও করে রাখা হয়। পরে নতুন ভিসি আসার পরেও ওই সাজা কার্যকরী হয়নি। সেই ‘নতুন ভিসি’ অভিজিৎ চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘ওই ঘটনায় আমরা তৎকালীন রাজ্যপাল এবং অ্যাডভোকেট জেনারেলের মতামত চেয়েছিলাম। তাঁরা উত্তর দেননি। র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে গিয়ে ছাত্র সংসদের বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। শিক্ষকরাও সাহায্য করেননি।’
এদিকে কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত গত এই পাঁচ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮টি র্যাগিংয়ের অভিযোগ দায়ের হয়। তাতে শাস্তির সুপারিশ হয় মোটে দু-চার জনের। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনও প্রমাণ বা সাক্ষী নাকি মেলেনি। এদিকে অভিযোগের অনেক কাগজপত্রও উধাও । এমনকী ২০২২-এর মার্চে ক্যাম্পাসে ফ্রেশার্স ওয়েলকামে গান্ধি ভবনের মঞ্চে তুলে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের নগ্নদৃশ্যে অভিনয় পর্যন্ত করানো হয়।
ছবি, ভিডিয়ো-সহ ইউজিসি’র কাছে অভিযোগ জমা হওয়ার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি জানায়, দোষী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! এই পর্বে দীর্ঘ সময় উপাচার্য ছিলেন সুরঞ্জন দাস। তবে এই ব্য়াপারে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এই পর্বে ডিন অফ স্টুডেন্টসের দায়িত্বে ছিলেন রজত রায়। তাঁর বক্তব্য, ‘তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে না করা হয়েছে।’