এবার কংগ্রেস শাসিত রাজ্য কর্নাটকে কাজে গিয়ে ‘খুন’ মালদার পরিযায়ী শ্রমিক

মৃত পরিযায়ী শ্রমিক খাইরুল জামাল
মৃত পরিযায়ী শ্রমিক খাইরুল জামাল

 নিজস্ব প্রতিবেদন, মালদা: ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে মোবাইল চুরির প্রতিবাদ করেছিলেন মালদার এক পরিযায়ী শ্রমিক। এরপরই বাঙালি ওই পরিযায়ী শ্রমিককে পিটিয়ে খুন করলো দুষ্কৃতীরা। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, ভিন রাজ্যে বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণেই এই নির্মম হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে হামলাকারীরা। বুধবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে কর্নাটক রাজ্যের মহীশূর জেলায়। ওইদিন রাতেই পুরাতন মালদার ওই পরিযায়ী শ্রমিকের বাড়িতে ফোন করে জানায় সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পুলিশ। সংসারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তিকে হারিয়ে রীতিমতো শোকে ভেঙে পড়েছে গোটা পরিবার।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের নাম খাইরুল জামাল (৫৪) । তাঁর বাড়ি পুরাতন মালদা থানার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দিলালপুর এলাকায়। খাইরুলের পরিবারে তাঁর স্ত্রী তাজকেরা বিবি এবং দুই মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ে শিউলির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছোট মেয়ে স্থানীয় একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পাঠরত। খাইরুলের বৃদ্ধ বাবা নুরুল ইসলাম রয়েছে। এত বড় পরিবারকে একাই রোজগার করে টানছিল ওই পরিযায়ী শ্রমিক। মৃতের বড় মেয়ে শিউলি বিবি বলেন, ‘ছয় মাস আগে কর্নাটকের মহীশূরে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়েছিলেন বাবা। মূলত বাবা অন্যান্য শ্রমিকদের জন্য রান্নার কাজটাই বেশি করতো। যেখানে নির্মাণ কাজ চলছিল, তার আশেপাশেই তাঁবু খাটিয়ে একসঙ্গে ২৫ থেকে ৩০ জন পরিযায়ী শ্রমিক থাকতো। যারা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার। বুধবার দুপুরে যখন বাবা রান্নার কাজ করছিল, তখন অন্যান্য পরিযায়ী শ্রমিকেরা নির্মাণের কাজে যুক্ত ছিল। সেই সময় স্থানীয় অচেনা এক যুবক তাঁবুতে ঢুকে মোবাইল চুরি করে। সেটি আমার বাবা হাতেনাতে ধরে ফেলে এবং প্রতিবাদ জানায়। এরপরই ওইদিন সন্ধ্যায় ওই যুবক দলবল নিয়ে এসে বাবার ওপর হামলা চালায়। তাঁবুর মধ্যে বাবাকে পিটিয়ে খুন করে। ঘটনার সময় ওখানে কেউ ছিল না। এমনকি বাংলা কথা বলার জন্য আরও বেশি অত্যাচার চালানো হয়। এই ঘটনায় আমরা অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’ এদিকে এই ঘটনার পর বৃহস্পতিবার মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের বাড়িতে দেখা করেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি’র জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ হালদার। তিনি বলেন, ‘কর্নাটকে কংগ্রেস শাসিত রাজ্য। শুধু তাই নয়, এই ধরনের বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেও বাংলাভাষীদের ওপর নির্মম অত্যাচার চালাচ্ছে একশ্রেণির মানুষ। মোবাইল চুরি হয়েছিল বলেই তো ওই পরিযায়ী শ্রমিক প্রতিবাদ জানিয়েছিল। তারজন্য ওকে এভাবে পিটিয়ে মারা হবে ভাবতেই অবাক লাগছে। শুধু মোবাইল চুরির প্রতিবাদ নয়, বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণেও খাইরুলের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছি।’ স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ওই পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মৃতের পরিবারের যে অভিযোগ গ্রহণ করার পাশাপাশি কর্নাটক রাজ্যের প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − 3 =