শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত ব্যবসায়ী অয়ন শীলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পুরসভায় টাকার বিনিময়ে চাকরি পাওয়ানোর অভিযোগ উঠলেও এই ঘটনায় তিনি যে শুধুমাত্র একাই জড়িত তা মানতে নারাজ এনফোর্সমেন্ট ডিপার্টমেন্ট দপ্তরের আধিকারিকেরা। তদন্তে নেমে ইডি-র আধিকারিকরা এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, অয়নের এই চক্র নিয়ন্ত্রণ করতেন রাজ্য সরকারের এক বা একাধিক কর্মচারি। একইসঙ্গে ইডি-র তরফ থেকে এও দাবি করা হয়েছে যে, চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে এঁদের যথেষ্ট প্রভাব ছিল। আর এমন তথ্য হাতে আসতেই এবার কোমর বেঁধে এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ জোগাড়ে নেমেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা।
পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে ইডি সরকারি ভাবে তদন্ত শুরু না করলেও, এতে অয়ন ও তাঁর পরিচিতদের যোগসূত্র মেলায় খুব স্বাভাবিক ভাবেই ইডি-র আতসকাচের তলায় চলে এসেছেন এঁরাও। এদিকে তৃণমূলের বহিষ্কৃত নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তারের পরই অয়নের ব্যাপারে আরও বেশ কিছু নতুন তথ্য পান কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। এরপরই অয়নকে গ্রেপ্তার করে আদালতে ইডি দাবি করে, শিক্ষক নিয়োগে ‘সোনার খনি’র খোঁজ মিলেছে। পাশাপাশি পুর-নিয়োগেও একই ভাবে দুর্নীতি হয়েছে। অবৈধ চাকরি-চক্রে অয়নের সঙ্গে কতজন জড়িত ছিলেন, কতজন এই টাকার ভাগ পেতেন সে সব খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। পুরসভাগুলিতে চাকরির জন্য টেন্ডার হলে অয়নের সংস্থা এবিএস ইনফোজেন তাতে অংশ নিত। শুধু তাই নয়, টেন্ডারও যে পেত তারা, এমন তথ্য ইতিমধ্যেই হাতে এসেছে তদন্তকারী আধিকারিকদের। আর এই সমগ্র ঘটনাটি ঘটেছে পুরসভার কোনও কর্তার মদতে তাও দাবি করা হচ্ছে ইডি-র তরফ থেকে। এর পাশাপাশি অয়নের বিরুদ্ধে এ অভিযোগও রয়েছে, চাকরির ওএমআর শিট বিকৃতিতেও সমান ভাবে যুক্ত ছিলেন অয়ন। তাঁর নির্দেশে পরীক্ষার উত্তরপত্র বা ওএমআর বিকৃত করত তারই সংস্থা। পাশাপাশি রাজ্যের প্রায় ৬০টি পুরসভার নিয়োগে অয়নের যোগ মিলেছে। কারচুপি করে টাকা তোলার পর, তা ট্রান্সফার হতো বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। এর মধ্যে কয়েকটি অ্যাকাউন্ট চিহ্নিতও হয়েছে। এ ভাবে এক এজেন্টকে অয়ন ২৬ কোটি টাকা দিয়েছিলেন। জানা গিয়েছে, ওই এজেন্ট ছিলেন ‘প্রভাবশালী’ সরকারি কর্মচারির মধ্যস্থতাকারী।
আর সেই কারণেই পুরসভার এই দুর্নীতি চক্রের পাণ্ডাদের ধরতে চাইছে ইডি।