ঋতিকা চক্রবর্তী: আর্জেন্টাইন ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি আসলেন কলকাতায়। তাতে আদতে ক্ষতি হল ভারতীয় ফুটবলেরই। মেসির এসে সংবর্ধিত করার কথা ছিল বাংলার সন্তোষ ট্রফি জয়ী দলকে। সেই সব তো হলই না, উল্টে বদনাম হল শহর কলকাতাত। মেসিকে দেখতে দেখতে সকালে যুবভারতী মুখী হয়েছিল ফুটবলপ্রেমী জনতা। এই স্বপ্নই সার হল কলকাতাবাসীর।
শনিবারের যুবভারতীতে চরম বিশৃঙ্খলা। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেন মূল উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্ত। মেসির গোট-কনসার্টে ভাঙচুর হল যুবভারতী স্টেডিয়ামে। হাজার হাজার টাকা খরচ করে টিকিট কেটেও প্রিয় তারকা মেসিকে দেখতে না পাওয়ার ক্ষোভে উত্তাল হয়ে পড়ে যুবভারতীর গ্যালারি। মাঠে পড়ল বোতল। গ্যালারির গেট ভেঙে মাঠে ঢুকে পড়লেন দর্শকরা। ভিআইপি মন্ত্রী ও একাধিক নিরাপত্তারক্ষীদের ভিড়ে মেসিই ঢাকা পড়ে গেল! সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবেও এই ঘটনায় হতাশ। ব্যর্থতার দায় সম্পূর্ণ বাংলার বলে তিনি মনে করছেন।
এআইএফএফ সভাপতি কল্যাণ চৌবে বলেন, “শনিবার সল্টলেক স্টেডিয়ামে যে ঘটনা ঘটেছে, তা সহজেই এড়ানো যেত। এমন কোনও ঘটনা ঘটলে আন্তর্জাতিক স্তরে নজরে পড়বেই। কলকাতাকে আমরা ভারতীয় ফুটবলের মক্কা বলে জানি। এখানে পেলে, মারাদোনা, লেভ ইয়াশিন, অলিভার কান, রজার মিল্লা বেবেতো-সহ অনেক লেজেন্ডারি ফুটবলাররা এসেছেন। এমন খেলোয়াড়দের আনার একটা প্রটোকল থাকে। এর কোনওটাই মানা হয়নি। সেই কারণেই বিশ্বের কাছে সম্মানহানি হতে হল। খেলা হল একটা দেশের সফট পাওয়ার। সেখানে উপরের সারিতে রয়েছে ফুটবল।”
তিনি আরও যোগ করেন, “২১১টা দেশে খবরটা ছড়িয়ে গিয়েছে। এটা কোনও ব্যক্তির বা রাজনৈতিক দলের ক্ষতি নয়। পশ্চিমবঙ্গে আন্তর্জাতিক খেলার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে এই ঘটনা। এর প্রভাব আগামী ৫০ বছর পশ্চিমবঙ্গে থাকবে। ভারত কমনওয়েলথ গেমস আয়োজন করছে। ভারতে একাধিক ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্ট আয়োজিত হবে। বড় কোনও আন্তর্জাতিক ইভেন্টের জন্য বিড করা হলে সেখানে অন্য দেশগুলিও থাকে। সেই সময় প্রশ্ন উঠতে পারে, কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গ কি সত্যিই আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতা আয়োজন করার জন্য তৈরি? এখানকার ব্যবস্থাপনা কি পরিণত?”
মেসির সঙ্গে ছিলেন অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্ত। এছাড়াও ছিলেন লুইস সুয়ারেজ এবং রডরিগো ডি’পল। মেসির চারপাশে অত্যধিক ভিড়ের কারণে ঢাকা পড়ে যান তিনি। গ্যালারি থাকা দর্শকরা তাই ঠিক করে দেখতেই পাননি। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মাঠ ছাড়েন মেসি। আরও ক্ষোভে ফেটে পড়ে গ্যালারি। যুবভারতীর স্টেডিয়াম জুড়ে থাকা মেসির ছবি ব্যানার ছিঁড়ে দেন দর্শকরা। গ্যালারির সিট ভেঙে ফেলে মাঠে ঢুকে পড়ে উত্তা জনতা। পুলিশ ঢুকে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যুবভারতী পৌঁছনোর আগেই মেসি সেখান থেকে বেরিয়ে যান।
মেসির সঙ্গে যুবভারতীতে ছিলেন শাহরুখ খান। বলিউডের কিং খান শুক্রবার রাতে পা রেখেছিলেন কলকাতায়। মেসিকে দেখার জন্য যুবভারতীর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে শাহরুখ খানকেও নিরাপত্তা বাড়াতে হয়। ঘটনার জেরে আঙুল উঠছে আয়োজককারীদের দিকে। এত টাকা খরচ করে সাধারণ মানুষেরাই বঞ্চিত হল।

