আবাস যোজনায় দুর্নীতি হয়নি, রাজ্যকে স্পষ্ট বার্তা কেন্দ্রের তরফ থেকে

আবাস যোজনায় দুর্নীতি হয়নি, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এমনটাই জানানো হল কেন্দ্র থেকে। আর এই বার্তা কেন্দ্র থেকে আসার পর পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে বঙ্গের শাসকদল নির্বাচনের দৌড়ে বিজেপিকে অনেকাটই পিছনে ফেলে দিল এটা বলাই বাহুল্য। কারণ, বিজেপি নেতানেত্রীদের একাংশ বারবার ‘আবাস যোজনা’য় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রককে চিঠি দেয়। শুধু তাই নয়, একাধিক জনসভাতেও আবাস দুর্নীতি নিয়ে সরব হতে দেখা গেছে বিজেপির বড় থেকে মাঝারি মাপের নেতাদেরও। কিন্তু এই সব অভিযোগ ধোপে টিকল না । শুধু তাই নয়, স্যাফ্রন ব্রিগেডের নেতানেত্রীদের মুখও পুড়ল তা বলাই যায়। কারণ, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, আবাসে কাটমানি বা ঘুষ নেওয়ার কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। এই প্রকল্পে যতগুলি বাড়ি অনুমোদন বা বাতিল হয়েছে, তা সবই হয়েছে নিয়ম মেনে। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলের এই রিপোর্ট দেখার পর ২৭ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্র চিঠি পাঠায় মুখ্যসচিব এইচ কে দ্বিবেদীকে। তাতেই উল্লেখ করা হয়েছে, আবাস যোজনায় ছোটখাটো বেনিয়ম ছাড়া কোনও দুর্নীতি হয়নি।

পঞ্চায়েত ভোটের আগে কেন্দ্রের এই চিঠি কার্যত ‘ট্রাম্প কার্ড’ এখন শাসক দলের কাছে। ১০ মার্চ কেন্দ্রকে পালটা চিঠি দিয়ে আবাসের বকেয়া টাকা চাওয়ার পাশাপাশি এই মিথ্যে অভিযোগকারী বিজেপি নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, তার পরামর্শ চাইবে নবান্ন। রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার এই প্রসঙ্গে এও জানান, ‘ওই চিঠির প্রেক্ষিতে যা বলার বিধানসভায় বলব।‘ একইসঙ্গে প্রদীপবাবুর সংযোজন, ‘কেন্দ্রের পাঠানো চিঠিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, এমনকী এফআইআর করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় দল যখন কোনও দুর্নীতির হদিশই পেল না, তাহলে কি ধরে নেব মিথ্যে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে কেন্দ্র?’ এই প্রসঙ্গে পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার আরও জানান, পর্যবেক্ষণ, কেন্দ্রীয় দল ৭ টি জেলা পরিদর্শন করেছে। আবাস যোজনায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে কেউ ঘুষ বা কাটমানি নিয়েছে কি না, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বহু মানুষকে এই প্রশ্ন করেছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু কোথাও কোনও অনিয়ম বা দুর্নীতির হদিশ পায়নি। পূর্ব মেদিনীপুর, মালদহের কালিয়াচকে বেশ কয়েকটি বাড়ির অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তদন্তকারীরা স্বীকার করে নিয়েছেন, কালিয়াচকের ১৩টি বাড়ির মধ্যে ১১টি রাজ্যই বাতিল করে দিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরে অভিযোগ ওঠা বাড়িগুলির দেওয়ালে ঠিক জায়গাতেই ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’র স্টিকার লাগানো আছে।

আদতে এই আবাস যোজনা, সড়ক যোজনা, ১০০ দিনের কাজ-সহ কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ উদ্যোগে চলা একাধিক প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র, এমনটাই অভিযোগ বারংবার জানিয়ে আসছে শাসকদল। আর এই টাকা আটকে রাখার কারণ হিসেবে দুর্নীতি প্রসঙ্গই বারবার সামনে আনতে দেখা গেছে বিজেপি বিধায়ক থেকে শুরু করে অন্যান্যা নেতাদেরও। এদিকে দুর্নীতির তদন্ত করতে এসে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দল ছোটখাটো দু, একটি ত্রুটি ছাড়া কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না।

এদিকে অবশ্য মুর্শিদাবাদ, দার্জিলিং, নদিয়া এই স্টিকার নিয়েই কয়েকটি বিচ্ছিন্ন অভিযোগ রয়েছে। যা নিয়ে রাজ্য প্রশাসন ইতিমধ্যেই জেলাগুলিকে সতর্ক করেছে। এবার দেখার, আটকে থাকা আবাসের টাকা কতদিনে রাজ্যকে পাঠায় কেন্দ্র।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − seven =