পূর্বপুরুষের হাত ধরে দেবী কালীমাতা স্বপ্নাদেশে পাওয়া মন্ত্রপুত ওষুধে রোগ সারাচ্ছেন নির্মল বালা

মালদা: এক চুটকি পাউডার, তেল মালিশ এবং স্বপ্নে পাওয়া মন্ত্রপুত ওষুধে নাকি ঝাড়ফুঁক করে সাড়ছে বাতের ব্যথা, পক্ষাঘাতের মতো জটিল রোগ। আর এই ধরনের রোগ সারাতেই এখন বামনগোলা ব্লকের নির্মল গোঁসাইয়ের বাড়িতেই উপচে পড়েছে মধ্যবয়স্ক থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ভিড়। নির্মল বালা ওরফে নির্মল গোঁসাই যদিও দাবি করে জানিয়েছেন, চাহিদা মতো টাকার বিনিময়ে এই সেবা দেওয়া হয় না। যার যা ইচ্ছে ভক্তেরা দিয়ে যান। কিন্তু পূর্বপুরুষের হাত ধরেই দেবী কালীমাতা স্বপ্নাদেশে পাওয়া মন্ত্রপুত ওষুধেই নাকি চটজলদি কাজ হয় এই ধরনের রোগাক্রান্ত মানুষের।
রবিবার সকালে গিয়ে দেখা যায় মালদা শুধু নয় বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ দিনাজপুর থেকেও কিছু অসুস্থ বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা এসেছেন তাদের আত্মীয়দের সঙ্গে। কেউ বাতের ব্যথায় আক্রান্ত। কেউ আবার পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে চলাফেরাই করতে পারেন না। আর সেইসব অসুস্থ মানুষদের প্রথমে মন্ত্রপুত ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে চলছে সুস্থ করার কাজ। এরপর দেওয়া হচ্ছে এক চিমটি পাউডার আর বিশেষ ধরনের শিশিতে মজুত রাখা তেল। যেটা নিয়মিত ব্যবহার করলে নাকি এই ধরনের রোগও সেরে যাচ্ছে বলে দাবি নির্মল বালা নামে ওই ব্যক্তির।
মালদা শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলো মিটার দূরত্ব বামনগোলা ব্লকের রাখালপুকুর গ্রাম। এই গ্রামের টাঙন নদী সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে নির্মল বালার বাড়ি। বাড়িতেই রয়েছে শিব মূর্তি এবং দেবী কালীর মন্দির। মায়ের সাধনা করেই নির্মল বালা মন্ত্রপুত ওষুধের আবিষ্কার করেছেন বলে দাবি করেছেন। যা থেকে অনেক রোগী পরিত্রাণ পাচ্ছেন। এই মায়ের মন্দির জাগ্রত বলে মনে করেন ভক্তেরা।
রবিবার সকালে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত মধ্যবয়স্ক এক মহিলা সুপ্রিয়া বিশ্বাসের মন্ত্রপুত ভাবে চিকিৎসা করছিলেন নির্মল বালা নামে ওই ব্যক্তি। কিছুক্ষণ ঝাড়ফুঁক করার পর সুপ্রিয়াদেবী বলেন, তার বাড়ি বামনগোলা এলাকাতেই। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি এই মন্দিরে আসছেন। নির্মলবাবার কাছে পক্ষাঘাতের চিকিৎসা করাচ্ছেন। তাতে নাকি অনেকটা সুস্থ হয়েছেন। এমনই দাবি করেছেন মুর্শিদাবাদ এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন এলাকা থেকে আসা আরো দুই ব্যক্তি দুলাল মণ্ডল এবং মাধব হালদার। তাদের দু’জনেরই বয়স ৭০ ছুঁইছুঁই। বয়সজনিত কারণে বাতের ব্যথায় আক্রান্ত তাঁরা। নিয়মিত ঝাড়ফুঁক করিয়ে নাকি তাঁরা এখন অনেকটাই সুস্থ আছেন। ব্যথা বাড়লেই নির্মল বালার বাড়িতে আসেন রোগ সারাতে।
এদিকে সপ্তাহে বেশিরভাগ দিনই মন্ত্রপুত ওষুধ দিয়ে এই ধরনের রোগীদের সুস্থ করার কাজ করছেন নির্মল বালা নামে ওই ব্যক্তি। তিনি জানিয়েছেন বংশ পরম্পরায় তিনি এই কাজ করে আসছেন। দেবীর স্বপ্ন দেশে পাওয়া বিশেষ ওষুধ রোগীদের দেন খাওয়ার জন্য। এছাড়াও মন্ত্রপুত ঝাড়ফুঁকেই অনায়াসে সুস্থ করে তোলেন অনেক রোগীদের। যদিও এনিয়ে উপস্থিত সেখানকার অসুস্থ মানুষেরা কোনওরকম বিতর্ক তৈরি করতে চাননি।
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের মালদা জেলা শাখার সভাপতি কেপি সিং জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার সমস্ত স্তরের অসুস্থ রোগীদের জন্য স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের ব্যবস্থা করেছেন। ব্লকে ব্লকে উন্নততর প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। অনায়াসে সেখানে গিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা রোগীরা পান। কিন্তু এই ধরনের বুজরুকির খপ্পরে না পড়াই উচিত। কিভাবে মন্ত্রপুত ওষুধে রোগী সুস্থ হচ্ছে তা জানা নেই। প্রয়োজনে বিজ্ঞান মঞ্চের কর্মীরা নির্মল বালার এই মন্ত্রপুত ঝাড়ফুঁকের তদারকি করে দেখবে বলেও জানিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × four =