নিয়োগ দুর্নীতিতে বড় ভূমিকা নীলাদ্রি-সুবীরেশ জুটির, দাবি সিবিআই-এর

নাইসার ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে থাকা নীলাদ্রি দাসকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছিলেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য। দুইজনের ঘনিষ্ঠতার আরও প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি সিবিআইয়ের। নাইসার বদলে এন়ডি ইনফোসিস্টেম নামে নিজের একটি সংস্থা খুলে ওএমআর শিটে কারচুপি করত নীলাদ্রি। এমনই জানা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে। পাশাপাশি সিবিআই এও দাবি করছে, সুবীরেশ ভট্টাচার্যর নির্দেশেই এই সংস্থাটি তৈরি করা হয়েছিল।
আর এই ২০১৯ সালে এসএসসি-তে ওএমআর শিট ছাপানোর বরাত পেয়েছিল এনডি ইনফোসিস্টেম নামে নীলাদ্রির এই সংস্থা। ফলে এখন সিবিআইয়ের স্ক্যানারে এই এনডি ইনফোসিস্টেম। সিবিআই সূত্রের দাবি, নাইসার সঙ্গে রাজ্যের মূল যোগসূত্র ছিল নীলাদ্রি দাস। সঙ্গে সিবিআইয়ের তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে, সুবীরেশের মাধ্যমে ২০১৬ সালে দিল্লির সংস্থা নাইসা প্রথম বরাত পায় ওএমআর শিট ছাপানোর। সেই বরাতের ভিত্তিতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ওএমআর শিট ছাপানোর কাজ করেছিল নাইসা। আর এখানেই ওএমআর শিট বিকৃত করে শুধু নম্বর বাড়ানো নয়, নম্বর কমানোর কাজও করতেন নীলাদ্রি’। শূন্যপদ সৃষ্টির জন্য নম্বর কমানো হত বলে দাবি করা হয়েছে সিবিআইয়ের তরফ থেকে। আর তা হতো এসএসসি কর্তাদের নির্দেশেই। অর্থাৎ, এই নিয়োগ দুর্নীতিতে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এই নীলাদ্রি দাস। প্রথমে নাইসা এবং পরে এনডি ইনফোসিস্টেম প্রাইভেট লিমিটেড। তাই এবার নীলাদ্রির নামে থাকা ওই সংস্থার ভূমিকাও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।
এই সব তথ্য হাতে আসার পরই সিবিআইয়ের তরফ থেকে যে চার্জেশিট বানানো হয়েছে ধৃতের বিরুদ্ধে তাতে ১২০ বি (অপরাধ মূলক ষড়যন্ত্র ), ২০১ (তথ্যপ্রমাণ লোপাট ), ৪২০ ( প্রতারণা ), ৪৬৭ (নকল ডকুমেন্টস তৈরি করা), ৪৬৮ (নকল নথি বানিয়ে ব্যবহার), ৪৭১ আইপিসি এবং প্রিভেনশন অফ কোরাপশন এক্ট ৭ & ৮ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। সিবিআই সূত্রে এ খবরও মিলছে, নাইসার আরও একাধিক আধিকারিকের উপরে এবার নজর রয়েছে সিবিআইয়ের। তাদেরও দ্রুত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে সিবিআই সূত্রের খবর। একইসঙ্গে সিবিআইয়ের তরফ থেকে এও দাবি করা হচ্ছে, ওএমআর শিট বিকৃত করার জন্য একটা টিম তৈরি করেছিলেন নীলাদ্রি৷ তাঁদের প্রত্যেককেই নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দেওয়া হতো। এমনকি, শুধু টিম তৈরিই নয়, নীলাদ্রি বহু এজেন্টও রাজ্যজুড়ে ছড়়িয়ে ছিল। তারাও টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার ক্যান্ডিডেট ধরে আনত৷ সিবিআই সূত্রে খবর, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব মেদিনীপুর সহ একাধিক জায়গায় ৯ এজেন্টের নাম মিলেছে ধৃত নীলাদ্রিকে জেরা করে। সূত্রের খবর, ২০১৮ সালে নাকি এসএসসি শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে ঝামেলা হয় নীলাদ্রির। কারণ, এসএসসি আধিকারিকরা যে নাম সুপারিশ করতেন, টাকার বিনিময়ে সেখানে নিজস্ব প্রার্থীদের নাম ঢুকিয়ে দিত নীলাদ্রি। এসএসসি কর্তারা বিষয়টি বুঝতে পারার পর চাকরি নামে প্রতারণা করার অভিযোগে নীলাদ্রির বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের হয় পটাশপুরে। ২০১৯ সালের ৭ মার্চ নীলাদ্রিকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এরই পাশাপাশি সিবিআইয়ের তরফ থেকে এও দাবি করা হয়েছে, নীলাদ্রিকে জেরা করে জানা গিয়েছে, এই কাজ করা হতো খুবই সুপরিকল্পিত ভাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − two =