মালদা: চিকিৎসায় গাফিলতি অভিযোগে রোগী মৃত্যুর ঘটনা প্রমাণিত হওয়ার পরেই মালদা শহরের একটি প্রতিষ্ঠিত নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ৩০ লক্ষ টাকা জরিমানা করল ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। তিনমাসের মধ্যে সেই জরিমানার টাকা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ক্রেতা সুরক্ষা আদালত।
ক্রেতা সুরক্ষা আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদা শহরের একটি নার্সিংহোম ও চিকিৎসক-সহ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ দায়ের করেছিলেন এক ব্যক্তি। ২০১৬ সালে মালদা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তর আদালতে এই অভিযোগ দায়ের করেছিলেন অমিত সাহা নামে এক ব্যক্তি। ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে অমিত সাহা অভিযোগ করে জানিয়েছিলেন, টাকার বিনিময়ে বেসরকারি নার্সিংহোম ও চিকিৎসকের কাছে তার স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রায় ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় কোনও চিকিৎসা করা হয়নি তার স্ত্রীর। তারই জেরে মৃত্যু হয়েছে তার স্ত্রীর। অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু করে ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তর। প্রায় আট বছর ধরে চলে এই মামলা। অবশেষে চলতি বছর ২৪ মে এই মামলার রায় ঘোষণা হয়। দুই পক্ষের সাক্ষী প্রমাণ নেওয়ার পর চিকিৎসক, নার্সিংহোম ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। অমিত সাহাকে ৩০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে মালদা শহরের সর্বমঙ্গলাপল্লি এলাকার বাসিন্দা অমিত সাহা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে একটি চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি অভিযোগ করে জানান, তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হলে মালদা শহরের চিকিৎসক এ. কে পোদ্দারকে দেখান। চিকিৎসক ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে সন্তান জন্মানোর তারিখ দেন। কিন্তু ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রসূতি অসুস্থ হলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। চিকিৎসক মালদা শহরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করায় রোগীকে। ২১ ফেব্রুয়ারি অপারেশন করে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। সকালে অপারেশন করে সন্তান জন্মানোর পর সকাল ১১.৩০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিট পর্যন্ত কোনও চিকিৎসা হয়নি। রোগীকে চিকিৎসক পর্যবেক্ষণ পর্যন্ত করেননি বেশ অভিযোগ। তারপর প্রসূতি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত নটা নাগাদ দ্বিতীয় অপারেশন হয়। তারপর ২২ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয় মহিলার। প্রথম অপারেশনের পর প্রায় আট ঘণ্টা কোনও চিকিৎসা হয়নি। এখানেই চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ তুলে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে অভিযোগ দায়ের হয়। কারণ, বেসরকারি নার্সিংহোমে টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়। ওই সময়ের জন্যও টাকা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিষেবা মেলেনি। সেই ভিত্তিতে অভিযোগ হয়। আদালতের পক্ষ থেকে চিকিৎসার গাফিলতির জন্য ২০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে চিকিৎসক নার্সিংহোম ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি আরও ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে মৃত প্রসূতির কন্যা সন্তানের লালন-পালনের জন্য। ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তর এর এমন রায় খুশি মৃত মহিলার পরিবার।