নাসার কনিষ্ঠতম ‘সিটিজেন সায়েন্টিস্ট’ কলকাতার আরুষ

সূর্য, চাঁদ তো দেখে সকলেই। কিন্তু তা নিয়ে ভাবে ক’জন? কেন সূর্য ওঠে, চাঁদের গায়ে কালো দাগ! আকাশ ভরা তারার রহস্য তেমন করে কজনই বা জানতে চায়। তবে এমনটা চেয়েছিল সাউথ পয়েন্ট স্কুলের ক্ষুদে ছাত্র আরুষ। ছোট থেকেই টেলিস্কোপে চোখ রাখতে ভালবাসে সে। মহাকাশ নিয়েই গবেষণা করতে চায় ন বছরের আরুষ নস্কর। তাই নাসার খুদে বিজ্ঞানীদের তালিকায় কলকাতার আরুষও একজন। ভারতে এখন নাসার কনিষ্ঠতম ‘সিটিজেন সায়েন্টিস্ট’ সে।

আরুষের বাবা কলকাতা অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের সিটিজেন সায়েন্টিস্ট অনুপম নস্কর। বাবার থেকেই ছোট্ট বয়সে মহকাশের প্রতি তার আগ্রহ তৈরি হয়। বাবার হাত ধরেই তারা চেনা শুরু। শুরু আকাশ দেখা। আর এই বয়সেই সে ৫টি গ্রহাণুর আবিষ্কারক আরুষ। মহাকাশে গ্রহ-নক্ষত্র বিষয়ক গবেষণার কাজে অনুপমবাবুরও নিজস্ব টিম আছে। গ্রহাণুদের অবস্থান, শনাক্তকরণ , নামকরণের প্রাথমিক কাজ করে থাকে আরুষ ও চার জন। ওই টিমের প্রধান অনুপমবাবু নিজে। দলে আছেন প্রবাস, বিশ্বেন্দু এবং তথাগত। সবাই চাকরি করেন। আরুষ সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। অনুপম বাবুদের টিম ১১টি নতুন গ্রহাণুর খোঁজ দিয়েছে। যার মধ্যে ৫টি গ্রহাণুর আবিষ্কারক আরুষ।

অনুপমবাবু জানালেন, নাসার সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসটেরয়েড সার্চ কোলাবোরেশন-এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরুষ। নাসা তার বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রকে ছড়িয়ে দিয়েছে। ছোটদের নিয়ে মহাকাশ বিজ্ঞান বিষয়ক নানা ক্যাম্পেন, ওয়ার্কশপ করে নাসা। ছোটরা ভাল কাজ করলে পুরস্কারও দেওয়া হয়। অ্যাস্টেরয়েড সার্চ কোলাবেরশনে নাসা মহাকাশে নতুন গ্রহ, গ্রহাণু বা মহাজাগতিক বস্তুদের শণাক্তকরণ, তাদের নামকরণ করার সুযোগ দেয়। বিশ্বের নানা দেশে নানা প্রান্তে অনেক পড়ুয়াই এই ক্যাম্পেনের সঙ্গে যুক্ত। আরুষও তাদের মধ্যে একজন।

সাউথ পয়েন্ট স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সে। আরুষের যখন পাঁচ বছর বয়স, তখন প্রথম কলকাতা থেকে চন্দ্রগ্রহণ দেখে সে। ছ’বছর বয়সে কেরল ঘুরতে গিয়ে সেখান থেকে বলয়গ্রাস সূর্য গ্রহণ দেখে। সেই সময় থেকেই ছোট্ট আরুষের মনে মহাকাশ নিয়ে কৌতুহল জন্মায়। তার সব কৌতুহলী প্রশ্নের উত্তর সহজ করে বুঝিয়ে দিতেন বাবা অনুপম নস্কর। তাতে আগ্রহ আরও বাড়ত আরুষের। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কম্পিউটার-ইন্টারনেটের সঙ্গে পরিচয় হয়। নাসা, ইসরোর ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখে সে। টেলিস্কোপ নিয়ে ইন্টারনেটে পড়াশোনা করে। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাঁর বাবাও।

অনুপম বাবু জানিয়েছেন, মহাকাশ বিজ্ঞানের গবেষণাকে জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে নাসা। তার একটি হল সিটিজেন সায়েন্টিস্ট। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে বসানো বিশাল দুটি টেলিস্কোপ প্যান স্টার ১ ও ২ থেকে পাঠানো ফাইল চিত্র ঘেঁটে মহাকাশে গ্রহাণু ও মহাজাগতিক বস্তুদের শণাক্তকরণ করা হয়। পুরো কাজটাই হল কম্পিউটার অ্যালগোরিদমে। টেলিস্কোপে নতুন যেসব মহাজাগতিক বস্তু চিহ্নিত করা হয় তাদের শণাক্তকরণ ও নামকরণের দায়িত্ব দেওয়া হয় ক্যাম্পেনে অংশগ্রহণকারীদের। তাদের কাজ হয় এইসব নতুন মহাজাগতিক বস্তুদের চিহ্নিত করা, পৃথিবীর নানা জায়গায় বসানো বিভিন্ন টেলিস্কোপের মাধ্যমে নতুন গ্রহাণুদের উপর নজর রাখা, তাদের গতিবিধি পরীক্ষা করা। এই কাজ যারা করে তাদেরই বলে সিটিজেন সায়েন্টিস্ট।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three − 1 =