শিকলে বাঁধা কালীর পৌরাণিক ইতিহাস

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঁকুড়া: কালী কার্তিকের শহর হিসেবে পরিচিত বাঁকুড়ার প্রাচীন পুরশহর সোনামুখী। আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে এই শহর ছিল জঙ্গলে ঘেরা। শহরের অলিগলিতে সে ভাবে গড়ে ওঠেনি জনমানবের বসবাস। সোনামুখী শহরের বহু প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম ক্ষ্যাপা কালী।
প্রাচীন প্রথা মেনে আনুমানিক ৪০০ বছর ধরে এই জনপদ সৃষ্টির বহু আগে থেকে এই ক্ষ্যাপা কালিমা পূজিত হয়ে আসছেন। আজ থেকে বহু বছর পূর্বে বীরভূমের সিউড়িতে রায় পরিবারের বসবাস ছিল। তাঁদের ছিল ক্ষ্যাপা কালী, হঠাৎ করে এলাকায় বর্গী আক্রমণ শুরু হয়। বর্গীদের অত্যাচারে রায় পরিবারের তৎকালীন সদস্যরা সিউড়িতে তাঁদের সমস্ত জমিজমা বসতবাড়ি ছেড়ে তাঁদের কুল দেবী মা ক্ষ্যাপা কালীকে মাথায় করে নিয়ে বাঁকুড়া জেলার জঙ্গলে ঘেরা এই সোনামুখীতে জঙ্গল কেটে বসবাস করতে শুরু করে। প্রতিষ্ঠা করা হয় ক্ষ্যাপা কালীকে।
যেহেতু ক্ষ্যাপা নামে পরিচিত তাই এই মা তাঁর সন্তানদের জন্য দয়াময়ী। কিন্তু মায়ের পুজোর কোনও বিঘ্ন হলে মা নাকি রুষ্ট হয়ে মন্দির ছেড়ে পলায়ন করেন। তাই পূজার দিন থেকে মায়ের পিছনের পা শিকল দিয়ে বাঁধা থাকে এবং মায়ের প্রতিমা নিরঞ্জনের দিন সেই শিকল থেকে মায়ের পা খুলে নিরঞ্জন করা হয়। কথিত আছে, একদা মায়ের পুজো চলাকালীন কোনও অজ্ঞাত কারণে পুজোর ত্রুটি হয়, তখন রুষ্ট হয়ে মন্দির ছেড়ে চলে যান। তারপর রায় পরিবারের সদস্যরা এবং পুরোহিত মিলে মাকে অনেক কাতর আর্জি জানিয়ে, মায়ের কাছে তাঁর মানত পূরণ করে, অনেক পূজার্চনার মধ্য দিয়ে পুনরাই মাকে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকে পুজোর তিনটে দিন মায়ের পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন রায় পরিবারের সদস্যরা।
তাঁরা মনে করেন, মাকে শিকল দিয়ে বেঁধে না রাখলে মা রুষ্ট হয়ে চলে যাবেন। রায় পরিবারের সদস্যদের দাবি, শিকল বাঁধা মা অনেক জাগ্রত কারণ একদিন এই জনপদের কুমোর পাড়াতে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে যায়। গরিব কুমোররা মায়ের কাছে কাতর আর্জি জানান, তাদের এই পাড়াকে রক্ষা করার জন্য। সেইসময় হঠাৎই কোনও এক দৈব শক্তিতে সেই আগুন আয়ত্ত্বে এসে যায়। তারপরেই এই অঞ্চলের বাসিন্দারা দেখেন, মায়ের ৪ হস্তের ওপরের দুই হস্ত কালো হয়ে গিয়েছে। ফলে মনে করা হয় ক্ষ্যাপা মা স্বহস্তে এই আগুনকে নিয়ন্ত্রণ করে ধ্বংসের হাত থেকে পাড়াকে রক্ষা করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − 1 =