ইসরোর চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্যের পরই শুরু হয়েছে সাফল্যের নেপথ্যের কারিগরদের খোঁজ। আর সেই খোঁজ শুরু হতেই জানা গিয়েছে, চন্দ্রযানের যন্ত্রাংশ তৈরি থেকে ল্যান্ডারের সফট ল্যান্ডিং, সবেতেই কোনও না কোনও বাঙালি বিজ্ঞানীর অবদান রয়েছে। বাংলার জেলায় জেলায় সেই মেধাবী ছেলে মেয়েরা রয়েছেন।
পিছিয়ে নেই বাংলার ও কলকাতার মেয়েরাও। ইসরোর সাত মহিলা রকেট বিজ্ঞানী চন্দ্রযান মিশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন। কেউ প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার তো কেউ ডেপুটি ডিরেক্টর। কলকাতার মেয়ে মৌমিতা দত্ত চন্দ্রযানের পেলোড, ইন্সট্রুমেন্ট, ক্যামেরা, স্পেকট্রোমিটার তৈরিতে বড় ভূমিকা নিয়েছেন। ইসরোর চন্দ্রযানে টিমে তিনিও অন্যতম সদস্য।
কলকাতায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা মৌমিতার। ßুñলজীবন হোলি চাইল্ড ইনস্টিটিউটে। এরপর রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্স নিয়ে এমটেক করেন। মৌমিতা একজন পদার্থবিদ যিনি চন্দ্রযান-১ মিশনেও ছিলেন। ২০০৬ সালে আমদাবাদের স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারে প্রথম যোগ দেন মৌমিতা। পরে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় ইসরোতে। একাধিক স্যাটেলাইট মিশনের অন্যতম ভূমিকায় ছিলেন কলকাতার বিজ্ঞানী।
হাইস্যাট, ওশেনস্যাট, রিসোর্সস্যাট, চন্দ্রযান-১ অভিযানের সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন। তবে মৌমিতার সবচেয়ে বড় কাজ ছিল মঙ্গল-অভিযানে। ইসরোর ‘মম’ মঙ্গল-মিশনের একজন প্রজেক্ট ম্যানেজার ছিলেন মৌমিতা। মঙ্গলযানের মিথেন সেন্সর তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা ছিল তাঁর। তাছাড়া মঙ্গলযানের পাঁচটি পেলোডের মধ্যে একটি তৈরি করেছিলেন মৌমিতা ও তাঁর টিম। অপটিকাল ইনস্ট্রুমেন্ট বা ইমেজিং স্পেকট্রোমিটার তৈরিতে তাঁর বিশেষ দক্ষতা রয়েছে।
ভারতের মঙ্গলযাত্রার সূচনা হয় ২০০৮ সালেই। সেই সময় চন্দ্রযান ১ নিয়ে প্রস্তুতি চলছিল পুরোদমে। প্রথম চন্দ্রাভিযানের পরেই ইসরোর দ্বিতীয় মিশন যে মঙ্গল-অভিযান, সেটা ঘোষণা করেন ইসরোর তৎকালীন চেয়ারম্যান জি মাধবন নায়ার। ভারতে মঙ্গলযাত্রার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘মার্স অরবিটার মিশন’ বা ‘মম’। তারই পাঁচটি যন্ত্র মিথেন সেন্সর, মার্স কালার ক্যামেরা, লেম্যান অলফা ফোটোমিটার মার্স এক্সোফেরিক নিউট্রাল কম্পোজিসন অ্যানালাইজার, থার্মাল ইনফ্র্যারেড ইমেজিং স্পেকট্রোমিটার মঙ্গলের মাটির গঠন, চরিত্র, আবহাওয়ার প্রকৃতি, বাতাসে মিথেন গ্যাসের অস্তিত্ব, বাযুমণ্ডলে অ-তরিদাহত কণার গবেষণা চালাচ্ছে। মঙ্গলযান ‘মম’ দেখিয়েছে, মঙ্গলে দিন-রাত আছে, ঋতু পরিবর্তন আছে, আছে উত্তর ও দক্ষিণ মেরু, খুব উঁচু পাহাড় আছে, বিরাট আগ্নেয়গিরি আছে, বিশাল নদীখাতও আছে, যা একদা সেখানে জল থাকার প্রমাণ দেয়। এই মিথেন সেন্সর তৈরি করেছিল যে টিম তার মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন মৌমিতা। চন্দ্রযান-১ মিশনেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। ‘মঙ্গলযান’ অভিযানে মৌমিতার অবদানের জন্য তাঁকে ইসরোর ‘টিম অফ এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়েছিল।