‘মহারাজা’স এক্সপ্রেস’ নামেই মালুম হয় এ-রাজ রাজরাদের ব্যাপার। কিন্তু এখন সে অর্থে না আছে রাজা, না আছে রাজ্যপাট! কিছু রাজাদের বংশধর ও বংশের ঐতিহ্য থাকলেও, এখন এই ট্রেনে শখে চাপতে পারেন একমাত্র ধনীরাই।কারণ এ ট্রেনের প্যাকেজ ট্রিপের দাম শুনলে চোখ কপালে উঠতে পারে যে কোনও ব্যক্তিরই।
বিভিন্ন ধরনের ঘর, ট্রেনে কত দিন, কোথায় পাড়ি দেবেন তার ওপর রয়েছে বিভিন্ন প্যাকেজ। যদি ২০২২-২৩ সালের মধ্যে এই ট্রেনে ট্যাভেল করেন, তাহলে ছয় রাত ও সাত দিনের প্যাকেজ ট্যুর ট্রেনের ডিলাক্স কেবিনে হলে, তাহলে মাথা পিছু ভাড়া পড়বে প্রায় ছ’লক্ষ টাকা। আর প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইট নিলে সেই ভাড়া বেড়ে হবে ১৮ লক্ষ টাকার ওপর। মূলত রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ঘোরে এই ট্রেন। দেখানো হয় আগ্রা, ফতেপুর সিকরি, উদয়পুর, বিকানের, রণথম্ভোর, খাজুরাহো-সহ বিভিন্ন জায়গা।
তবে, নাম তার যেমন, ভেতরের রূপ ও আরামও তার তেমন। ‘মহারাজা এক্সপ্রেস’ ভারতের শুধু নয়, এশিয়ার অন্যতম বিলাসবহুল ট্রেন। যার ভেতর আছে রাজকীয় থাকা, খানা ও পিনার সমস্ত ব্যবস্থা। পাহাড়ি পথের সৌন্দর্য যদি গদি মোড়া কাউচে আধশোয়া হয়ে, শ্যাম্পেনে চুমুক দিয়ে দেখতে হয়, তবে চেপে বসতেই হবে এই ট্রেনে। স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন আসতে পারে কী আছে এই ট্রেনে? বলা ভাল কী নেই? ট্রেনটি বাইরে থেকে দেখতে অত্যন্ত সাধারণ দূরপাল্লার ট্রেন মনে হলেও, ভেতরে এর প্রতিটি কামরায় রয়েছে ‘রয়্যাল লুক।’
প্রথমত এই ট্রেনে ওঠার আগেই যাত্রীর জন্য স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম চত্বরে পেতে দেওয়া হয় লাল কার্পেট। আর বাদ্যযন্ত্র সহযোগে সেখানে থাকে যাত্রীকে অতিথি হিসেবে বরণ করে নেওয়ার ব্যবস্থা।
ভাবা যায়, একটা ট্রেনের মধ্যে রয়েছে চার ধরনের ঘর। তার মধ্যে ডবল বেডেড রুম থেকে রাজকীয় প্রেসিডিন্সিয়াল স্যুইট আছে। যা তাবড় লাক্সরি হোটেলর বিলাসবহুল ব্যবস্থাকে ম্লান করে দিতে পারে। ঘরের সঙ্গে অ্যাটাচ বাথরুমে বাথ টাব, থেকে আছে দামী কাচ, আসবাব, অ্যান্টিক ফার্নিচার। ঘর থাকে টাটকা দামী ফুলের ছোঁয়া। নরম বিছানায় শরীর ফেললেই তা মুহূর্তে আপনাকে নিয়ে যেতে পারে আরামের রাজ্যে।
এই ট্রেনে থাকা, খাওয়া ও ঘোরার প্যাকেজ একসঙ্গে। রাজস্থানের ট্র্যাডিশনাল খাবারের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি রকমারি রান্নার সম্ভার থাকে যাত্রীদের জন্য। থাকে দামী অ্যালকোহল, মকটেলও।
বলা চলে মহারাজা এক্সপ্রেস ট্রেনের ভেতরে বিলাসবহুল জীবনাত্রার এক আশ্চর্য নিদর্শন।ট্রেনের ভেতরে বিমান সেবক ও সেবিকাদের মতোই থাকেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীরা। প্রত্যেকেই পরিচ্ছন্নভাবে ইউনিফর্ম পরে থাকেন। সেই পোশাকেও থাকে রাজকীয় ছোঁয়া।
এই ট্রেনে চার ধরনের ঘর আছে। দুই রাত তিন দিন, চার রাত পাঁচ দিন, ছয় রাত সাত দিন-সহ বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ। আছে চার ধরনের রুম। ডিলাক্স কেবিন, জুনিয়ার সুইট, সুইট ও প্রেসিডেন্সিয়াল সুইট। যার মধ্যে সবচেয়ে দামী ও বিলাস বহুল প্রেসিডেন্সিয়াল সুইট। সেখানে ঘর, বাথরুম, স্নানাগারের পাশাপাশি আছে আলাদা বসার ঘর ও বহুবিধ সুযোগ সুবিধা। ট্রেনের প্রতিটি কামরাতেই রয়েছে অ্যান্টিক ফার্নিচার।
বর্ণনা ও দাম শুনেই স্পষ্ট এ ট্রেন আম-আদমির নয়। তবু যদি কখনও টাকা-পয়সা জমিয়ে এ ট্রেনে চড়ার শখ থাকে, তাহলে কিন্তু মাঝেমধ্যে দেওয়া হয় বিশেষ ছাড়ও। গুগুলে গিয়ে এই ট্রেনের ওয়েবসাইটে চোখ রাখলেই এ ব্যাপারে মিলবে যাবতীয় তথ্য।