টাকার বিনিময়ে চাকরি বিক্রি যে বিক্রি করেছেন তেহট্টের বিধায়ক এমন অভিযোগ উঠেছিল আগেই। তবে এতে লাভবান হয়েছে তেহট্টের বিধায়কের আপ্তসহায়কও , এমনটাই এবার দাবি সিবিআই আধিকারিকদের। ফলে এবার তাপস সাহার নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে সিবিআইয়ের নজরে যেমন বিধায়ক তাপস সাহার ব্যাংক আকাউন্ট ঠিক তেমনই নজর রাখা হয়েছে তাঁর আপ্তসহায়ক প্রবীর কয়ালের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেনেও।
সিবিআই-এর তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, এখনও পর্যন্ত পাওয়া নথি ও তথ্য যা বলছে তাতে ২০২২ সালে দু’মাসের মধ্যে প্রবীরের অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে এক কোটি টাকারও বেশি। ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ এপ্রিলের মধ্যে একটি ব্যাঙ্কের তেহট্টের ব্র্যাঞ্চে প্রবীর কয়ালের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছিল সব মিলিয়ে ১ কোটি ৪২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা।
এখানেই শেষ নয়, ওই বছর ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে হাওড়ার একটি ব্যাঙ্কের ব্র্যাঞ্চে, প্রবীরের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছিল ৬১ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা। অল্প সময়ে এত টাকা কী ভাবে তাঁর অ্যাকাউন্টে এল এবার তার খোঁজে সিবিআই আধিকারিকেরা। প্রসঙ্গত, নদিয়া, কলকাতা ও হাওড়ায় এখনও পর্যন্ত ছ’টির বেশি অ্যাকাউন্ট পাওয়া গিয়েছে প্রবীরের। এছাড়া, তাপসের অ্যাকাউন্টের দিকেও নজর রয়েছে সিবিআইয়ের। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য নেওয়া হয়েছে তাপস ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেত্রী ইতি সরকারেরও।
এদিকে সূত্র মারফৎ এও জানা যাচ্ছে, ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন রাজ্য সরকারি দপ্তরে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা তুলেছেন বিধায়ক তাপস সাহা ও তাঁর আপ্ত সহায়ক প্রবীর কয়াল। যাঁদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই রাজ্যের দুর্নীতি দমন শাখায় মামলা রুজু হয়েছে। এই মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে সিবিআইকে। এই এফআইআরের উপরে ভিত্তি করেই গত শুক্র ও শনিবার একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা।
এরপরই সিবিআইয়ের তরফ থেকে দাবি করা হয়, বিধায়কের আপ্ত সহায়ক প্রবীরও বিধায়কের নাম ভাঙিয়ে নিজের প্রভাব খাটিয়ে চাকরি বিক্রি করতেন। কারণ, তদন্তে নেমে সিবিআই আধিকারিকেরা জানতে পারেন, আসলে তেহট্ট বিধানসভার অন্তর্গত বিভিন্ন এলাকা থেকে চাকরি বিক্রির টাকাই এসেছে তাঁর কাছে। কখনও নগদে হয়েছে লাখ লাখ টাকার হাত বদল। আবার কখনও অ্যাকাউন্ট মারফত। এমনকি, রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখার কাছে কয়েকজন অভিযোগকারী এমন বয়ানও দিয়েছেন যে, তাঁরা প্রবীরকেই সরাসরি টাকা দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত বছর এপ্রিল মাসে সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে নদিয়ার তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহার আপ্তসহায়ক-সহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করে রাজ্যের দুর্নীতি দমন শাখা। ২০১৬ সাল থেকে বিধায়কের আপ্তসহায়ক হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন বছর চল্লিশের প্রবীর। যদিও প্রবীরের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক ছিল না বলেই দাবি করেন তেহট্টের বিধায়ক।