সন্দেশখালি কাণ্ডের জন্য রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস তথা রাজ্য সরকারকে দায়ী করে তীব্র আক্রমণ শানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভোট ঘোষণার অনেক আগেই রাজ্যে এসে কার্যত ভোট প্রচারের সুর বেঁধে দিলেন বিজেপির পোস্টার বয়। শুক্রবার হুগলির আরামবাগের জনসভার মঞ্চ থেকে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে বিপুল দুর্নীতির অভিযোগ তুলে রাজ্য থেকে উৎখাতের ডাক দিয়েছেন মোদি । রাজ্যের ৪২ টি আসনে বিজেপিকে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। রাজ্য সরকারকে গরিব বিরোধী ও নারী বিরোধী বলেও সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আরামবাগের জনসভার শুরু থেকেই রাজ্যের শাসক দল ও সরকারের বিরুদ্ধে এদিন প্রধানমন্ত্রীর সুর ছিল যথেষ্ট উচ্চ গ্রামে।
আরামবাগের প্রকাশ্য জনসভায় তিনি বলেন, সন্দেশখালিতে মহিলাদের সঙ্গে যা ঘটেছে তা অপরাধের সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করেছে। নাম না করে সন্দেশখালি কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত শেখ শাহজাহানকে রাজ্য সরকার আশ্রয় দিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্দেশখালীর অত্যাচারিত মহিলারা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আশ্রয় চাইলেও তার দলের কর্তারা অভিযুক্ত ওই নেতাকে বাঁচাতে নিজেদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন। তার দল বিজেপি লাগাতার মহিলাদের জন্য লড়াই করেছে এবং তাদের জন্য মার খেয়েছে। অবশেষে বিজেপির লাগাতার চাপেই প্রায় দুমাস ফেরার থাকার পরে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।
সন্দেশখালি প্রসঙ্গে বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের ভূমিকার ও তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাম কংগ্রেসের মত ওই জোটের শরিকেরা একাধিকবার বৈঠক করলেও সন্দেশখালি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর জবাব চাওয়ার সাহস পাননি। বরং কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধি এই ঘটনাকে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। যা বাংলার সংস্কৃতির অপমান বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন।
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার এ রাজ্যের জন্য বিপুল অর্থ বরাদ্দ করলেও রাজ্য সরকারের বাধার কারণে বাংলার গরিব মানুষ পাকা ঘরের স্বপ্ন দেখে বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও এদিন অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আবাস যোজনায় কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে রাজ্য সরকার এবং শাসক দলের লাগাতার অভিযোগ এবং আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তাঁর এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। আরামবাগের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, আয়ুষ্মান ভারত, কিষান সম্মান নিধি একের পর এক কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়নে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ রাজ্যে আবাস যোজনায় ৪৫ লক্ষ বাড়ি তৈরির জন্য ৪২ হাজার কোটি টাকা ছাড়া হয়েছে। কিন্তু এরাজ্যের সরকার ওই প্রকল্পে বাধার সৃষ্টি করছে বলে মানুষ বাড়ি পাচ্ছেন না।
তিনি অভিযোগ করেন, রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার মানুষের কল্যাণের জন্য কোনোভাবেই ভাবিত নয়। সে কারণেই আয়ুষ্মান ভারত, কিষান সম্মান নিধীর মতো প্রকল্প এ রাজ্যে রূপায়ণ করতে দেওয়া হচ্ছে না। কেন্দ্রের হর ঘর জল প্রকল্পের চার বছরে ১১ কোটি মানুষকে বিশুদ্ধ নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হলেও এ রাজ্যে সে কাজ এগোচ্ছে কচ্ছপের গতিতে। এছাড়া রাজ্য সরকারের বাধায় ঝরিয়া-রানীগঞ্জ কয়লা খনি প্রকল্প ছ বছর ধরে আটকে রয়েছে, ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যের জগদীশপুর- হলদিয়া- বোকারো- ধামরা পাইপ লাইন প্রকল্প চার বছর ধরে আটকে রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন। তারকেশ্বর- বিষ্ণুপুর রেল প্রকল্প সম্প্রসারণও তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের বাধায় গতি পাচ্ছে না বলে তিনি জানিয়েছেন।
প্রাইমারি ও পুরসভায় নিয়োগ, রেশন বণ্টনে অনিয়মের প্রসঙ্গ তুলে রাজ্যের শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পশ্চিমবঙ্গ দুর্নীতি-ভ্রষ্টাচারের নতুন মডেলের পরিণত হয়েছে। শাসক দলের নেতারা অপরাধীদের রক্ষাকবজ দিয়ে দুহাতে পয়সা রোজগার করছেন। তাই তৃণমূল নেতাদের ঘর থেকে বস্তা বস্তা টাকা উদ্ধার হচ্ছে। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্তে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন এখানকার মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং অভিযুক্তকে বাঁচাতে ধর্নায় বসছেন। কিন্তু তিনি এর শেষ দেখে ছাড়বেন।