উত্তর-পূর্বে কল্পতরু মোদি

অরুণাচল এখন তোলপাড় চিন আগ্রাসন নিয়ে। শুধু অরুণাচলই নয়, এর ছাপ পড়েছে ভারতীয় রাজনীতিতেও। এমনই এক প্রেক্ষিতে মেঘালয় ও ত্রিপুরায় দু’দিনের উত্তর-পূর্ব ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এদিকে কয়েকদিন আগেই আসন্ন মেঘালয় বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের তরফ থেকে প্রচার পর্ব শুরু করে এসেছেন। এরপই মোদি-শাহের এই সফর যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মেঘালয়ের রাজনীতিতে তা বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন পড়ে না। আর নির্বাচনের ঠিক আগে এই দুই দিনের সফরে এই দুই বিজেপি শাসিত রাজ্যে ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের শিলান্যাস করতেও দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। উত্তর-পূর্ব ভারতে উন্নয়নের ঝুলি হয়তো তিনি খুলে ধরলেন ঠিকই, তবে সীমান্ত সমস্যা বা চিনা আগ্রাসন নিয়ে একটা কথাও বলতে শোনা যায়নি মোদি-শাহকে।

রবিবার শিলংয়ে উত্তর-পূর্ব পরিষদের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘সব ধরনের উন্নয়নমূলক কাজে গতি আনতে হবে আমাদের।‘ পাশাপাশি এও জানান, ‘আমরা এখন সবাই ফুটবল জ্বরে আক্রান্ত। খেলার সময় কেউ যদি অন্যায় কিছু করে, তাকে লাল কার্ড দেখিয়ে বের করে দেওয়া হয়। একইভাবে আমরাও গত ৮ বছর ধরে উত্তর-পূর্বের উন্নয়নে বহু প্রতিবন্ধকতাকে লাল কার্ড দেখিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়েছি। আমরা দুর্নীতি, একচোখোমি, নেপোটিজম, হিংসা, প্রকল্প আটকে রাখা এবং ভোট ব্যাঙ্ক রাজনীতিকে দূর করেছি। কিন্তু আপনারা জানেন, এসব অসুখ সমাজের অনেক গভীরে গেঁথে আছে। তাই এসবকে মূল থেকে উপড়ে ফেলতে সকলের সাহায্য দরকার।’

এরই পাশাপাশি এই রাজ্যে উন্নয়নের পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

জানান, গত ৮ বছরে মেঘলায়ের জাতীয় সড়ক করার জন্য খরচ করা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। এইসঙ্গে গত আট বছরে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনায় যত রাস্তা করা হয়েছে তা আগে কোনদিন হয়নি। এই প্রসঙ্গে এও জানান, ‘গত ২০ বছরে এখানে যত রাস্তা করা হয়েছে, গত ৮ বছরে তার প্রায় ৭ গুণ রাস্তা করা হয়েছে উত্তরপূর্ব ভারতে।’শুধু তাই নয়, মানুষের সুবিধার জন্য প্রত্যন্ত এলাকায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বৃদ্ধি করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার।

প্রসঙ্গত, এদিনের এই ই অনুষ্ঠান থেকে একাধিক রাস্তা এবং প্রকল্পের উদ্বোধন এবং শিলান্যাস করেন প্রধানমন্ত্রী। এখানেই প্রধানমন্ত্রীর দাবি, এই রাস্তা এবং প্রকল্পগুলির সুবিধা পাবেন মেঘালয়ের বাসিন্দারা। সঙ্গে লাভবান হবেন মেঘলায়ের সঙ্গে যুক্ত অন্য রাজ্যগুলিও। একইসঙ্গে এই অনুষ্ঠানেই ৬ লেনের একটি রাস্তায় কাজের শিলান্যাস করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, এই রাস্তা মেঘালয়ের সঙ্গে যুক্ত করবে অসম, ত্রিপুরা এবং মিজোরামকে। চার লেনের আরও একটি রাস্তারও শিলান্যাস করেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাাপাশি প্রধানমন্ত্রী এও জানান, ‘আমরা শুধু মাত্র সড়কপথে নয়, ট্রেন এবং বিমানপথের যোগাযোগ আর বৃদ্ধি করতে উদ্যোগ নিয়েছি। এখানের বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করা হয়েছে। তার লাভ পাচ্ছেন প্রত্যন্ত এলাকার কৃষকরা। তারা এখন সহজে এবং কম সময়ে অন্য রাজ্যে তাদের উৎপাদিত ফসল পাঠাতে পারছেন।’

শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী এও জানান, তারা মেঘলায় এবং উত্তরপূর্ব ভারতের অন্য এলাকায় মোবাইল ব্যবস্থার উন্নতি করতে চাইছেন। এই লক্ষ্য নিয়ে মোবাইল টাওয়ার বসানো হচ্ছে। এইজন্য খরচ করা হচ্ছে ৫ হাজার কোটি টাকা। তিনি জানান, সেখানের বাসিন্দাদের সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য গ্রামীণ এলাকার রাস্তা আর বেশি করে করার দিকে জোর দেওয়া হয়েছে।

সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এও জানান, তারা বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে সীমান্ত বিবাদ মেটাতে যেমন উদ্যোগ নিয়েছেন, সেই সঙ্গে এই এলাকার সীমান্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করার দিকেও নজর দিয়েছেন। যেমন, সীমান্ত এলাকার সঙ্গে নজর দেওয়া হয়েছে গ্রামের উন্নয়নের দিকেও। আর এরই রেশ ধরে প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘আমাদের কাছে সীমান্তের গ্রাম দেশের শেষ গ্রাম নয়। এখান থেকেই দেশের শুরু। এই গ্রামের সুরক্ষা এবং উন্নয়ন না হলে দেশের উন্নয়ন হয় না। তাই আমরা ভাইব্রান্ট বর্ডার ভিলেজ প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এতে দেশের একদম শেষ সীমা অবধি নতুন রাস্তা , টানেল, রেলপথে যোগাযোগ বাড়াচ্ছি। আমরা বলে দিয়েছি, সেখানে যা যা করার দরকার তা করতে হবে। এর ফলে দেশের সুরক্ষা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনই এলাকার বাসিন্দারাও সুবিধা পাবে।‘ এরই পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কী কী করেছে তারও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানান, ‘মোদির নেতৃত্বে উত্তর-পূর্ব ভারতের অনেক উন্নতি হয়েছে। এখানে শান্তি ফিরেছে। আফস্পা নিয়ে অনেকে অনেক বড় বড় কথা বলেছে। কিন্তু, কাজে কেউ দেখায়নি। আফস্পা প্রত্যাহারের সাহস কেবলমাত্র এই সরকার দেখিয়েছে। আগে উত্তর-পূর্ব ভারত বলতে মানুষ বনধ, বিস্ফোরণ, গুলিবৃষ্টিকে জানত। কয়েক ডজন জঙ্গি গোষ্ঠী এখানে রাজ চালাত। পর্যটন মার খাচ্ছিল। গত ৮ বছরে জঙ্গিপনা কমিয়ে এনে ফেলেছি আমরা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 1 =