নেতাজিকে ভোলানোর চেষ্টা হয়েছিল’, আন্দামানে ২১ দ্বীপের নামকরণের অনুষ্ঠানে দাবি নমোর

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ১২৬ তম জন্মদিনে সোমবার দেশজুড়ে পরাক্রম দিবস পালন করা হল কেন্দ্রের তরফ থেকে। এই উপলক্ষে আন্দামন নিকোবরে ২১ টি বড় অনামি দ্বীপের নামকরণ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরমবীরচক্রে সম্মানিত ২১ জন সেনার নামে নামকরণ করা হয়েছে এই ২১টি দ্বীপের। ২০১৮ সালে আন্দামানের রস আইল্যান্ডের নাম আগেই নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর নামে করা হয়েছিল।  পাশাপাশি নীল আইল্যান্ড এবং হ্যাভলক আইল্যান্ডের নামকরণ করা হয়েছিল শহিদ দ্বীপ ও স্বরাজ দ্বীপের নামে। এরপর সোমবার ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এই নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু দ্বীপেই  ন্যাশনাল মেমোরিয়ালের মডেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে এদিন এর পাশাপাশি এ অভিযোগও করেন, ‘এক সময় নেতাজিকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল।‘ এই ভাবেই এদিনের এই নামকরণ অনুষ্ঠান থেকেই নাম না করে পূর্ববর্তী কংগ্রেস সরকারকে বিদ্ধ করতেও ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

এদিনের এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতাজির সময়কালের ইতিহাসের ঘটনা তুলে জানান, ব্রিটিশের সঙ্গে লড়াই করে আন্দামানে-নিকোবর পৌঁছে গিয়েছিল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ বাহিনী।আজাদ হিন্দ সরকারও তৈরি করেন নেতাজি। এরই রেশ ধরে বীর সাভারকরসহ বিপ্লবীদের সেলুলার জেলে বন্দি থাকার কথাও নিজের বক্তব্য রাখতে গিয়ে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গে এও জানান, বেশ কয়েক বছর আগে এই বীর বিপ্লবীদের স্মরণে তিনটি দ্বীপের নামকরণের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। এবার পরমবীর চক্রে সম্মানিত বীর সৈনিকদের নামে নামকরণ হল ২১ দ্বীপের। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এও জানান, ‘এই আন্দামানেই প্রথম তেরঙ্গা পতাকা তোলা হয়েছিল। স্বাধীন ভারতের প্রথম সরকার তৈরি হয়েছিল।’ প্রসঙ্গত, এদিন সেনার শীর্ষ সম্মান পরম বীর চক্র প্রাপক ২১ জন বীর সেনার নামে আন্দামান নিকোবরে ২১ টি বড় নামহীন দ্বীপের নামকরণ। এই নামকরণ করার কারণ হিসেবে মোদি এদিন এও জানান,’এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর বার্তা দেয়। বীর সেনাদের অবদান এই নামকরণের মাধ্যমে অমর হয়ে থাকব বলেও এদিন মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

এই প্রসঙ্গে মোদি এদিন নেতাজিকে দেশবাসীর মনে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তাঁর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার কী কী করেছে তা মনে করিয়ে দেন তিনি। মোদি এদিন এ দাবিও করেন, গত ৮ থেকে ৯ বছরে তাঁকে নিয়ে অনেক কাজ হয়েছে দেশে। এই প্রসঙ্গেই তিনি মনে করিয়ে দেন, ‘আমাদের দ্বীপের নামে ঔপিনবেশিকতা ও দাসত্বের ছাপ ছিল। আমার সৌভাগ্য এই যে ৪ থেকে ৫ বছর আগে আমি যখন পোর্ট ব্লেয়ার গিয়েছিলাম তখন তিনটি প্রধান দ্বীপের নাম ভারতীয়দের নামে নামকরণের সুযোগ পেয়েছিলাম।’

এদিন আন্দামান নিকোবরে ২১ টি দ্বীপের নামকরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এদিনের অনুষ্ঠানে জানান, ‘যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন এই বীর সেনাদের নাম চিরস্থায়ী করতেই কেন্দ্রের এই প্রচেষ্টা।’ এদিকে সূত্রে খবর, নিকোবর-দ্বীপপুঞ্জের বৃহত্তম অনামী দ্বীপের নামকরণ করা হয়েছে মেজর সোমনাথ শর্মার নামে। ১৯৪৭ সালের ৩ নভেম্বর শ্রীনগর বিমানবন্দরে পাক হামলার মোকাবিলা করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন ভারতের এই বীর সৈনিক।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সাল থেকে নেতাজির জন্মদিনে পরাক্রম দিবস পালন শুরু করে কেন্দ্র। ওই বছর কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং। এরপর ২০২২ সালে নেতাজি জয়ন্তীতে ইন্ডিয়া গেটের ক্যানোপিতে নেতাজির হলোগ্রাম মূর্তির উদ্বোধন করেন নমো। গত অগাস্টে সেই হলোগ্রাম মূর্তির বদলে প্রতিষ্ঠা করা হয় গ্রানাইট পাথরের নেতাজির মূর্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 5 =