শিয়রে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে দক্ষিণবঙ্গের পর এবার উত্তরবঙ্গে নজর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। মাত্র ৯ দিনে চার সভা করেছেন তিনি। শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সভা ছিল বিজেপির শক্তঘাঁটি চা -বলয়ে। সম্প্রতি অন্তর্কলহ, তৃণমূলের লাগাতার প্রচার, প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষের জেরে উত্তরের জেলাগুলিতে বিজেপির ভিত কিছুটা হলেও টলমল। সেই জনসমর্থন ফিরিয়ে আনতে চাবলয়ের চা-আবেগকে উস্কে দিলেন মোদি। একইসঙ্গে বাংলায় ভাষণ শুরু করে চমক দিলেন তিনি। শিলিগুড়ির কাওয়াখালির রাজনৈতিক সভা মঞ্চে শুরুতেই বাংলায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমার মা-দাদা-দিদি-ভাই-বোনেদের আমার নমস্কার।’ শুধু বাংলা নয়, উপস্থিত জনতাকে নমস্কার জানালেন নেপালি ভাষাতেও। বললেন, ‘চা শ্রমিকদের চাওয়ালার নমস্কার।’ এছাড়াও উত্তরবঙ্গের সব বুথে পদ্ম ফোটানোর আশ্বাসও শিলিগুড়ির সভা থেকে চাইলেন তিনি।
পাশাপাশি, চলতি মাসে চতুর্থবার বঙ্গে ভোটপ্রচারে এসে ফের তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অস্ত্রে আক্রমণ শানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শিলিগুড়ির কাওয়াখালির সভা থেকে তাঁর তোপ, ‘বিনামূল্যে দেশবাসীকে রেশন দিচ্ছে কেন্দ্র। অথচ এই বঙ্গে রেশন দুর্নীতিতেই জেলে খাদ্যমন্ত্রী। তৃণমূল সরকার গরিব বিরোধী। তাই রেশন নিয়েও এখানে দুর্নীতি হয়েছে।’
শনিবার অসম এবং অরুণাচল সফর সেরে শিলিগুড়ি পৌঁছতে কিছুটা দেরি হয় মোদির। এর পরে সরকারি কর্মসূচির আগে ১২ কিলোমিটার রোড শো হয় শিলিগুড়ি শহরে। মোদি পরে বলেন, ওই রোড শোয়ের তেমন কোনও পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না। ঠিক ছিল, বিমানবন্দরে নেমে তিনি সড়কপথে কাওয়াখালিতে কর্মসূচির মঞ্চে আসবেন। কিন্তু রাস্তার পাশে মানুষের উৎসাহ দেখে তিনিই চালককে বলেন, ধীরে গাড়ি চালাতে।
এমনিতেই বাংলায় তৃণমূল বিরোধী আক্রমণ শানাতে বার বার ‘দুর্নীতি’ অস্ত্র তুলে নিয়েছে দিল্লির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এবার শিলিগুড়িতে মোদির সভায় ফের সেই প্রসঙ্গই উঠে এল। আর এসব অস্ত্রে ভর দিয়েই চব্বিশের লোকসভা ভোটে বঙ্গে পদ্মের প্রভাব আরও বিস্তার করতে চায় বিজেপি।
এদিনের সভা থেকে মোদির বক্তব্য, করোনা কালে দেশের দরিদ্র মানুষজনের জন্য বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার ঘোষণা করে কেন্দ্র। তার মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হবে। কিন্তু বাংলায় সেই বিনামূল্যের রেশন নিয়েও দুর্নীতির পরিমাণ এতটাই যে খোদ মন্ত্রীরাই কারাবন্দি। শুধু রেশনই নয়, শিক্ষা-সহ নানা দুর্নীতিতেই তৃণমূল বুঝিয়েছে, তারা গরিব বিরোধী। মোদির আরও অভিযোগ, সমস্ত কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা আসে বাংলায়, কিন্তু তা ‘তোলাবাজ’দের পকেটে ঢোকে। অথচ রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে সরব। এসব ঘটনা বাংলার গরিমা খর্ব করেছে বলে দাবি প্রধানমন্ত্রীর।
এদিনের মঞ্চ থেকে একাধিক প্রকল্পের ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। যার মধ্যে রেলের নতুন ঘোষণা রয়েছে। এ ছাড়াও সড়ক মন্ত্রকের নতুন প্রকল্পও রয়েছে। এ ভাবেই প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার আলাদা আলাদা প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। রেল এবং সড়কপথের উন্নয়ন সংক্রান্ত মোট সাড়ে চার হাজার কোটির কেন্দ্রীয় প্রকল্প ঘোষণা করেন মোদি। রেল লাইনের বৈদ্যুতিকরণ সংক্রান্ত উত্তর বঙ্গের প্রকল্প উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে রয়েছে একলাখি; বালুরঘাট বিভাগ, বারসোই; রাধিকাপুর বিভাগ, রানিনগর জলপাইগুড়ি; হলদিবাড়ি বিভাগ, শিলিগুড়ি; আলুয়াবাড়ি বিভাগ ভায়া বাগডোগরা, শিলিগুড়ি; সেবক; আলিপুরদুয়ার জংশন; সামুকতলা।