স্কুলেই কিচেন গার্ডেনের সবজিতে মিড ডে মিল!

নিজস্ব প্রতিবেদন, বর্ধমান: মিড ডে মিলের গুণগত মান নিয়ে অভিযোগ একাধিকবার সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে। কিন্তু মিড ডে মিলের রকমারি খাবারের কথা কখনও সংবাদ শিরোনামে তেমন দেখা যায়নি। এবার মিড ডে মিলের রকমারি খাবারের প্রশংসার খবর উঠে এল।
পড়ুয়াদের পাতে কোনও দিন এ্যাঁচড় চিংড়ি, কোনও দিন শাক পোস্ত, তো কোনও দিন ঢেঁড়শ, আবার কোনও দিন পাঁচমিশালি সবজির তরকারি। আর পড়ুয়ারা বেশ আনন্দের সঙ্গে তৃপ্তি করে তা খাচ্ছে। আর এই সব সবজির উৎস তাদের নিজেদের স্কুলেরই বাগান। তারা নিজেরাই বাগানে সবজি ফলায়। প্রসঙ্গত, সরকারি ভাবে রাজ্যের বিভিন্ন ব্লকের বিভিন্ন স্কুলকে কিচেন গার্ডেন করার জন্য অনুদান দেওয়া হয়েছিল। এরপরই অনেক বিদ্যালয়ই নিজেদের স্কুলের মধ্যে করেছিল কিচেন গার্ডেন। এখন সেখান থেকেই তারা সবজি নিয়ে চালাচ্ছে মিড ডে মিল। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের এরকম তিনটি স্কুলে এই চিত্র ধরা পড়ল।
চৌবেরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝাপানডাঙা সাবিত্রী দেবী বালিকা বিদ্যালয় ও রেওরা প্রাথমিক বিদ্যালয় এই তিনটি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা ও ছাত্র ছাত্রীরা সকলে মিলে অতি যত্ন সহকারে নিজেদের স্কুলে তৈরি করেছেন কিচেন গার্ডেন। ফলিয়েছেন বিভিন্ন সবজি, যা দিয়েই তাঁরা শিশুদর মিড ডে মিলে সবজির জোগান দিয়ে যাচ্ছেন। সাবিত্রী দেবী বালিকা বিদ্যালয়ে সবজি বাগানের সঙ্গে রয়েছে কাঁঠাল গাছ। এই কাঁঠাল গাছের এ্যাঁচড় দিয়েই শিশুদের পাতে তাঁরা দিতে পারছেন এ্যাঁচড় চিংড়ি। দুই প্রাথমিক বিদ্যালয় ফলানো হয়েছে বিভিন্ন শাক। খুদে পড়ুয়াদের পাতে দিচ্ছেন শাক পোস্ত।
চৌবেরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিব্যেন্দু সেনশর্মা জানান, তাঁরা বিদ্যালয়ে সবজির বাগান করে সেখানে নানান ধরনের সবজি ফলিয়েছেন এবং সেই সবজি দিয়েই মিড ডে মিল চালান। তাঁরা নিজেরাই সবজি বাগানের দেখাশোনা করেন। নিজেদের বাগানে ফলানো সতেজ সবজি ছাত্রছাত্রীরা পায় যাতে কোনও কীটনাশক দেওয়া থাকে না। রেওড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুদীপ্ত কুমার ঘোষ জানান, বিদ্যালয়ের বাগানে সবজি ফলানোর ফলে ছাত্রছাত্রীরা যেমন টাটকা, তাজা সবজি পায়, তেমন তাদের বাগান তৈরির ও™র একটা ঝোঁক তৈরি হয়, যা তাদের ভবিষ্যতে অনেক কাজে দেবে। আর নিজেদের বাগানের সবজি রান্না করলে খরচও কিছুটা কমে। যার ফলে তাঁরা কোনও কোনও দিন ছাত্রছাত্রীদের স্পেশাল নিউট্রিশন হিসাবে অন্যান্য খাবার দিতে পারেন, যেমন তাঁরা আখের রস পড়ুয়াদের খাইয়েছেন।
সাবিত্রী দেবী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জয়তী আইচ মিত্র জানান, তাঁদের বিদ্যালয়ে সবজির বাগানের সঙ্গে তাঁরা বিদ্যালয়ে কাঁঠাল গাছ বসিয়েছেন। তাতে এখন অনেক এ্যাঁচড় ধরেছে। তাই দিয়েই তাঁরা ছাত্রীদের এ্যাঁচড় চিংড়ি খাওয়াচ্ছেন। আর ছাত্রছাত্রীরা প্রতিদিন খাবার মেনুতে নিত্যনতুন জিনিস পাওয়ায় খুবই মজা করে খাচ্ছে। জামালপুরের বিডিও পার্থ সারথী দে জানান, তাঁরা প্রতিটি বিদ্যালয়কেই এই বিষয়ে উৎসাহ দিচ্ছেন, যাতে কম বেশি সকলেই নিজেদের বিদ্যালয়ে কিচেন গার্ডেন করেন। এর জন্য সরকারি অনুদানও পাওয়া যায়। তবে ব্লকের বিভিন্ন স্কুলে নিজেদের সবজির বাগানের সবজি দিয়েই মিড ডে মিল রান্নার ব্যাপারটায় তিনি বিদ্যালয়গুলোর প্রশংসা করেন। প্রয়োজনে তিনি নিজে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে কিচেন গার্ডেন দেখতে যাবেন বলেও জানান।
প্রতিটি ßুñল যদি এই ভাবে নিজেদের স্কুলেই কিচেন গার্ডেন করে সবজি ফলিয়ে রান্না করে খাওয়ায় তা হলে একদিকে যেমন শিশুরা টাটকা, তাজা সবজি পাবে যাতে কোনও রকম বিষাক্ত কীটনাশক থাকবে না, বিদ্যালয়ে বাগান হওয়ার ফলে বিদ্যালয় হবে পরিবেশ বান্ধব এবং খরচও সাশ্রয় হবে বলে তাঁর দাবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − 13 =